আজকে আমি আপনাদের শোনাতে চাই অয়ন আর সঙ্গীতার যৌনপ্রেমের কাহিনী। জানি না কতটা ভালো লিখতে পারবো, তাই আশা করবো আপনারা আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
গাড়ির কাচে ছোট ছোট বৃষ্টির ফোটা পড়ছে, আকাশে মেঘের ঘনঘটা এখনও কাটেনি, যেন রাত নেমে এসেছে দুপুরবেলায় । বাইরে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয়, আকাশের বড্ডো মন খারাপ, যে কোনো সময় কান্না করে দিবে। বিষন্ন একটা পরিবেশ বাইরে। অয়নের মনের অবস্থাও ঠিক বাইরের আকাশের মতো। অয়নের মনে হচ্ছে, সে একা একা একটা বড় সমুদ্রের মাঝখানে ভাসছে। আজকে অয়ন নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবা-মা,বোনকে ছেড়ে চলে এসেছে, দা সিটি অফ জয় নামে বিখ্যাত কলকাতাতে।ট্রামের ঘণ্টাধ্বনি, রাস্তার কোলাহল, সব মিলে কলকাতা শহর অয়নের কাছে একটা বড় স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। অয়ন চৌধুরী বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রামের এক সাধারণ ছেলে। অয়নের বাবা সামান্য একজন কৃষক, তাই বলে অয়নরা গরিব কিন্তু নয় ওদের স্বচ্ছল বলাই শ্রেয়।
অয়ন একজন প্রতিভাবান, স্বাবলম্বী ও গভীর চিন্তাশীল যুবক, যার মেধা ও জ্ঞানের আলোয় গোটা গ্রাম আলোকিত। “অয়ন স্যার” নামে পরিচিত এই তরুণ শিক্ষকের কাছে গ্রামের সব বাচ্চারা পড়তে আসে। শুধু গ্রামেই নয়, স্কুলেও অয়ন তারকা ছাত্র। বর্ধমান জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সে স্বাবলম্বী, বাবার কাছে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া তার স্বভাবে নেই। বই পড়া ও কবিতা লেখা তার প্রধান শখ।
অয়নের স্বপ্ন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার, আর এই স্বপ্ন তাকে দিনরাত পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখে। সাহিত্যের জগৎ তার কাছে এক গভীর আকর্ষণের বিষয়, যা তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বই পড়া, কবিতা লেখা এবং সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে চিন্তা করা তার নিত্যদিনের কাজ। এই গভীর মনোযোগের কারণে সে বাইরের জগতের সাথে খুব একটা মেশে না; বরং নিজের মনের জগতে বিচরণ করে। যদিও সে কম কথা বলে, কিন্তু মনমতো মানুষের সঙ্গ পেলে কথার ঝুড়ি খুলে বসে। তার লেখায় ফুটে ওঠে তার মনের ভাব, তার চিন্তার গভীরতা।
অয়নের পরিবারে বাবা-মা আর একটি ছোট বোন রয়েছে। পরিবারের সবাই তার স্বপ্নকে সমর্থন করে। বিকেলবেলা সে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করে, যা তার জন্য শুধু শারীরিক কসরত নয়, বরং মনকে বিশ্রাম দেয়ার একটি উপায়। একদিকে গ্রামের শিক্ষক, অন্যদিকে মেধাবী ছাত্র ও স্বাবলম্বী যুবক—অয়ন এক মিশেল ব্যক্তিত্ব, যার মধ্যে আছে এক অদ্ভুত প্রতিভা, অক্লান্ত পরিশ্রম, আর এক সুপ্ত স্বপ্নের জ্বালা।
অয়ন দেখতেও খুব হ্যান্ডসাম। লম্বা, পেটানো শরীরের সাথে সাথে ওর চোখ গুলো বড্ডো সুন্দর। স্কুল জীবনে প্রেম প্রস্তাব কম পায়নি। কম করেও ৫-৬টা নূন্যতম পেয়েছে। কিন্তু অয়ন সব গুলোকে না করে দিয়েছে। অয়ন এখনও নিজের মনের মানুষকে খুঁজছে ওর বিশ্বাস যে ওর হবে সে হবে সবার থেকে আলাদা অন্যরকম হবে আর অয়নের একটু ভরাট শরীর পছন্দ। অয়ন দেখতে দেখতে এসেছে পড়লো বেহালার একটা বাসায়। এই বাসারই ৫ তলায় থাকে সূর্যদা । দারোয়ানের কাছে থেকে কোন বাসা জানার পর ওরা উঠে পড়লো ৫ তলায়। দরজায় দাঁড়িয়ে বেল বাজালো অয়ন। বেল বাজানোর কিছুক্ষন পর দরজা খুলে দিলো ২৯ কি ৩০ বছরের এক মহিলা। মহিলা বললেও ভুল হবে মেয়ে বলাটাই ঠিক। হাতে শাখা পলা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না এই মেয়ে কোন বাড়ির বউ। সূর্য হলো অয়নের জেঠুর ছেলে। জেঠু অনেক আগেই কাজের জন্য কলকাতা এসেছিলেন এসে এইখানেই বিয়ে করে জেঠিকে নিয়ে সংসার শুরু করেন। সূর্যদা জেঠুর একমাত্র ছেলে। সূর্যদা একজন ইঞ্জিনিয়ার। সূর্যদা এখানের এক মেয়েকে বিয়ে করে এইখানেই সেটেল। অয়ন আজকে প্রথম সূর্যর বৌকে দেখলো কারণ বিয়েতে আসা হয়নি মাধ্যমিকের জন্য। বাবা আর পিসির কাছে শুনেছে,মেয়ে নাকি খুব সুন্দরী, কিন্তু অয়নের মনে হচ্ছে এতো শুধু সুন্দরী না এতো অপ্সরা। অয়ন এই অপ্সরাকে দেখে নিজের সব ভুলে যাওয়ার জোগাড়।
অয়ন আর ওর বাবাকে দেখে, সঙ্গীতা বলে উঠলো,
“নমস্কার কাকা বাবু কেমন আছেন? আমি কতক্ষন ধরে বসে আছি আর আপনারা এলেন এখন?”
এই বলে সঙ্গীতা সুন্দর এক ভুবন ভোলানো হাসি দিলো, যা দেখে অয়ন একটা হার্ট বিট মিস করলো। অয়ন হাসি দেখে নিজেই বললো,
“আচ্ছা কেও কি এতো সুন্দর হতে পারে? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?”
এই সব ভাবছে। এমন সময় অয়নের বাবা বললো,
“আর বলোনা মা আমি রাস্তা ঘাট এতো চিনি না আর ট্রেন আসতে দেরি করলো তাই আমাদের দেরি হলো।”
“ইসসস সেই সকালে বের হয়েছেন আর এই ভর দুপুরে আসলেন আসুন আসুন বসুন।”
অয়ন আর ওর বাবা ঘরের ভেতর প্রবেশ করল। ঘরটা খুব সুন্দর করে ঘুছানো। ঘরে ঢুকেই দেখলো একটা মোটামুটি বড়ো ধরণের ডাইনিং রুম সেখানে সোফা ডাইনিং টেবিল আছে সেখানে একটা ডাইনিং টেবিল রাখা। আর আছে চারটা রুম। একটা সোফা রুম আর সব গুলো বেডরুম। অয়ন আর ওর বাবা ২ জনে গিয়েছিলাম সোফা রুমে বসলো। আর ওদের পাশে এসে বসলো সঙ্গীতা। সঙ্গীতা জিজ্ঞেস করলো,
“কাকাবাবু আপনি আমাদের সাথে থেকে যান আজ কালকে সকালে ট্রেন ধরবেন না হয়।”
“না না মা। আমার বাসায় অনেক কাজ আর ইট পাথরের দুনিয়া আমার ভালো লাগে না। তুমি বরং আমার এই ছেলেটার দিকে খেয়াল রেখো। তুমি তো জানোই ছেলেটার পড়ার ইচ্ছা আছে তাই এতো দূর নিয়ে আসা।”
এখন সঙ্গীতা কাকাবাবুর পাশে বসা ছেলেটিকে দেখলো। পেটানো শরীর গায়ের রং ফর্সা ৫ ফুট ১০কি ১১ তো হবেই। অয়নের ছোট বেলার ছবি
দেখেছিলো এর পর আর দেখা হয়নি কিন্তু ছেলেটা এই বয়সেই যে একটা পরিণত পুরুষ হয়ে উঠবে এইটা সঙ্গীতা আশা করেনি। সঙ্গীতা যখন অয়নের দিকে তাকালো আর ওদের চোখে চোখ পড়লো তখন অয়ন সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললো। এইটা দেখে সঙ্গীতা মনে মনে হেসে ফেললো কিন্তু প্রকাশ করলো না। সঙ্গীতা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে অয়নকে জিজ্ঞেস করলো
“কেমন আছো অয়ন?”
“ভালো।”
অয়ন তখনও মাথা নত করে বসে আছে। অয়নকে দেখে বুঝা যাচ্ছে ও অনেক লজ্জা পাচ্ছে তাই ওকে আর ঘাটালো না। সঙ্গীতা বললো,
“চলুন কাকা আপনাদের রুমটা দেখিয়ে দিচ্ছি। আপনারা একটু ফ্রেশ হয়ে নিন আর ততক্ষনে সূর্য এসেছে পড়বে।”
অয়ন আর ওর বাবা রুমে আসলো, রামটা আহামরি বড়ো না হলেও একজনের জন্য বেশ বড়ো। যাইহোক অয়নের বাবা চলে গেলেন ফ্রেশ হতে। অয়ন রুমে আসার সাথে সাথে দেখেছে এই রুমের আসে লাগোয়া একটা ব্যালকোনি যা দিয়ে সুন্দর বাতাস আসে আর মাঝে মাঝে পড়া থেকে বিশ্রাম নিয়ে একটু বসার জন্য এটার চেয়ে উত্তম জায়গা আর হতে পারে না। ভালোই লাগলো অয়নের রুমটা। অয়ন একটু দেখার জন্য বারান্দায় গেলো। সামনে কিছু গাছ পালা আছে। যা এখন কলকাতায় দেখা অনেক কঠিন তাও যে এখানে দেখার যাচ্ছে এইটা বা কম কি। অয়ন দেখতে লাগলো এই ইট পাথরের দুনিয়া। নিজের গ্রামের মাঠ থেকে পড়ার জন্য ও আজ এই ইট পাথরের শহরের বন্দি। এইসব ভাবছিলো আর এর মধ্যেই অয়নের বাবা অয়নকে ডাক দিল, ফ্রেশ হয়ে নেওয়ার জন্য। অয়ন তাড়াতাড়ি করে ফ্রেধ হয়ে নিলো আর একটা গেঞ্জি আর শর্ট পড়ে নিলো। সূর্যদা আসতে আরো কিছু সময় বাকি তাই নিজের ব্যাগ থেকে বই গুলো বের করে রুমেই রাখা একটা টেবিলে গুছিয়ে রাখতে লাগল। এমন সময় সঙ্গীতা ঘরে এলো,
“কাকা আসুন খাবার বাড়ছি।”
এই বলে সঙ্গীতা চলে গেলো। ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখল সূর্যদা বসে আছে। অয়ন সাথে সাথে গিয়ে সূর্যকে জড়িয়ে ধরল , সুর্যও অয়নকে জড়িয়ে ধরলো, আর হেসে দিয়ে বললো,
“কিরে অয়ন কেমন আছিস অনেক বড় হয়ে গেছিস তো দেখি? ”
“ভালো আছি দাদা তুমি কেমন আছো?”
“আমিও খুব ভালো আছি। এখন থেকে আমি তোমাদের সাথেই থাকব।”
” হ্যাঁ, জানি জানি শুনে খুব ভালোই লাগলো থাক তুই আমাদের কাছে। ”
তারপর সূর্য অয়নকে ছেড়ে দিয়ে অয়নের বাবাকে জিজ্ঞেস করল,
” কেমন আছো কাকু ভাল আছো তো? খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করছো না মনে হয় একদম শুকিয়ে গিয়েছো। ”
এই কথা শুনে অয়নের বাবা হেসে দিল, আর বলল,
” ভালো আছি রে খোকা, এই মাঠে-ঘাটা একটু কাজ করতে হয় এই আর কি। ”
সূর্য সাথে সাথে বলল,
” বসো বসো আর দেরি করো না, অনেক দূর থেকে এসেছো , সকালের পর মনে আর কিছু পেটে পারেনি চলো খাওয়া শুরু করি। ”
এই বলে সবাই খাওয়া শুরু করল সঙ্গীতাও ওদের সাথে বসে পড়ল। খাওয়ার টেবিলে হলো না না আড্ডা সে কি কথা। অনেকদিন পর কাকা তার ভাতিজাকে পেয়েছে কথা থামছেই না তাদের।
নানান গল্পের মাঝেই খাওয়া শেষ করল অয়ন।
তারপর সবাই একসাথে লিভিং রুমে গিয়ে বসলো।
তখন অয়নরের বাবা বলতে শুরু করল,
” সূর্য বাবা জানিস তো আমি বেশি পড়ালেখা করিনি। তাই আমার এই সম্পর্কে জ্ঞানও কিছুটা কম। কিন্তু আমার ছেলেটা বড্ড মেধাবী তুই তো জানিস আমার ছেলেটা এখানে কলেজে ভর্তি হতে চায় কিন্তু তার জন্য নাকি কোচিং করতে হবে গ্রামে তো সেই কোচিং নেই তাই আমি বাধ্য হয়ে তোর কাছে নিয়ে আসলাম। আমি চাইছিলাম যে তোদের কাছে কয়েকটা মাস থাকুক ও কলেজে চান্স পেলেই আমি ওকে নিয়ে যাব। ততদিন তুই তোরে একটু দেখ তোদের কাছে রাখ তোদের কাছে পড়া। এটুকু করতে পারবি বাবা।”
তখন সূর্য বলে উঠলো,
“আরে কাকা কি করছো তুমি , কেন পারবো না আমি পারবো , আমি অয়নকে দেখে রাখবো আর আমি তো জানি অয়ন কতটা ভালো ছাত্র। আমি এইখানে ওকে এক নামকরা কোচিং এ ভর্তি করে দেবো ও খুব ভালো মতো পড়তে পারবে। তুমি একদম চিন্তা করো না।”
এই কথা শুনে অয়নের বাবার চোখে পানি চলে এলো, আর বলল
” তুই বাঁচালি আমাকে বাবা। ”
সঙ্গীতা পাশে থেকে বলে উঠল,
“আপনি চিন্তা করবেন না কাকা, অয়নকে আমরা দেখে রাখবো ওর কোন কিছুর কমতে হবে না।”
অয়নের বাবা শুনে খুব খুশি হলেন। আড্ডা জন্য আর অনেকক্ষণ দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেলো। অয়নের বাবা তখন বললো,
“আমি রওনা দেই তাহলে না হলে ট্রেন টা মিস করবো। ”
সূর্য হওয়া সঙ্গীতা অনেক রিকুয়েস্ট করার পরও বাবাকে রাখতে পারল না। তাই না পেরে সূর্য একটা ট্যাক্সি বুক করে দিল এবং ট্যাক্সিটাকে ট্রেন স্টেশনে নামিয়ে আসতে বলল, অয়নও ওর বাবার সাথে গেল ট্রেন স্টেশনে। সেখানে গিয়ে অয়ন ওর বাবাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে তারপর বাড়ি ফিরলো।
গাড়ির কাচে ছোট ছোট বৃষ্টির ফোটা পড়ছে, আকাশে মেঘের ঘনঘটা এখনও কাটেনি, যেন রাত নেমে এসেছে দুপুরবেলায় । বাইরে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয়, আকাশের বড্ডো মন খারাপ, যে কোনো সময় কান্না করে দিবে। বিষন্ন একটা পরিবেশ বাইরে। অয়নের মনের অবস্থাও ঠিক বাইরের আকাশের মতো। অয়নের মনে হচ্ছে, সে একা একা একটা বড় সমুদ্রের মাঝখানে ভাসছে। আজকে অয়ন নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবা-মা,বোনকে ছেড়ে চলে এসেছে, দা সিটি অফ জয় নামে বিখ্যাত কলকাতাতে।ট্রামের ঘণ্টাধ্বনি, রাস্তার কোলাহল, সব মিলে কলকাতা শহর অয়নের কাছে একটা বড় স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। অয়ন চৌধুরী বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রামের এক সাধারণ ছেলে। অয়নের বাবা সামান্য একজন কৃষক, তাই বলে অয়নরা গরিব কিন্তু নয় ওদের স্বচ্ছল বলাই শ্রেয়।
অয়ন একজন প্রতিভাবান, স্বাবলম্বী ও গভীর চিন্তাশীল যুবক, যার মেধা ও জ্ঞানের আলোয় গোটা গ্রাম আলোকিত। “অয়ন স্যার” নামে পরিচিত এই তরুণ শিক্ষকের কাছে গ্রামের সব বাচ্চারা পড়তে আসে। শুধু গ্রামেই নয়, স্কুলেও অয়ন তারকা ছাত্র। বর্ধমান জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সে স্বাবলম্বী, বাবার কাছে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া তার স্বভাবে নেই। বই পড়া ও কবিতা লেখা তার প্রধান শখ।
অয়নের স্বপ্ন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার, আর এই স্বপ্ন তাকে দিনরাত পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখে। সাহিত্যের জগৎ তার কাছে এক গভীর আকর্ষণের বিষয়, যা তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বই পড়া, কবিতা লেখা এবং সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে চিন্তা করা তার নিত্যদিনের কাজ। এই গভীর মনোযোগের কারণে সে বাইরের জগতের সাথে খুব একটা মেশে না; বরং নিজের মনের জগতে বিচরণ করে। যদিও সে কম কথা বলে, কিন্তু মনমতো মানুষের সঙ্গ পেলে কথার ঝুড়ি খুলে বসে। তার লেখায় ফুটে ওঠে তার মনের ভাব, তার চিন্তার গভীরতা।
অয়নের পরিবারে বাবা-মা আর একটি ছোট বোন রয়েছে। পরিবারের সবাই তার স্বপ্নকে সমর্থন করে। বিকেলবেলা সে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করে, যা তার জন্য শুধু শারীরিক কসরত নয়, বরং মনকে বিশ্রাম দেয়ার একটি উপায়। একদিকে গ্রামের শিক্ষক, অন্যদিকে মেধাবী ছাত্র ও স্বাবলম্বী যুবক—অয়ন এক মিশেল ব্যক্তিত্ব, যার মধ্যে আছে এক অদ্ভুত প্রতিভা, অক্লান্ত পরিশ্রম, আর এক সুপ্ত স্বপ্নের জ্বালা।
অয়ন দেখতেও খুব হ্যান্ডসাম। লম্বা, পেটানো শরীরের সাথে সাথে ওর চোখ গুলো বড্ডো সুন্দর। স্কুল জীবনে প্রেম প্রস্তাব কম পায়নি। কম করেও ৫-৬টা নূন্যতম পেয়েছে। কিন্তু অয়ন সব গুলোকে না করে দিয়েছে। অয়ন এখনও নিজের মনের মানুষকে খুঁজছে ওর বিশ্বাস যে ওর হবে সে হবে সবার থেকে আলাদা অন্যরকম হবে আর অয়নের একটু ভরাট শরীর পছন্দ। অয়ন দেখতে দেখতে এসেছে পড়লো বেহালার একটা বাসায়। এই বাসারই ৫ তলায় থাকে সূর্যদা । দারোয়ানের কাছে থেকে কোন বাসা জানার পর ওরা উঠে পড়লো ৫ তলায়। দরজায় দাঁড়িয়ে বেল বাজালো অয়ন। বেল বাজানোর কিছুক্ষন পর দরজা খুলে দিলো ২৯ কি ৩০ বছরের এক মহিলা। মহিলা বললেও ভুল হবে মেয়ে বলাটাই ঠিক। হাতে শাখা পলা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না এই মেয়ে কোন বাড়ির বউ। সূর্য হলো অয়নের জেঠুর ছেলে। জেঠু অনেক আগেই কাজের জন্য কলকাতা এসেছিলেন এসে এইখানেই বিয়ে করে জেঠিকে নিয়ে সংসার শুরু করেন। সূর্যদা জেঠুর একমাত্র ছেলে। সূর্যদা একজন ইঞ্জিনিয়ার। সূর্যদা এখানের এক মেয়েকে বিয়ে করে এইখানেই সেটেল। অয়ন আজকে প্রথম সূর্যর বৌকে দেখলো কারণ বিয়েতে আসা হয়নি মাধ্যমিকের জন্য। বাবা আর পিসির কাছে শুনেছে,মেয়ে নাকি খুব সুন্দরী, কিন্তু অয়নের মনে হচ্ছে এতো শুধু সুন্দরী না এতো অপ্সরা। অয়ন এই অপ্সরাকে দেখে নিজের সব ভুলে যাওয়ার জোগাড়।
অয়ন আর ওর বাবাকে দেখে, সঙ্গীতা বলে উঠলো,
“নমস্কার কাকা বাবু কেমন আছেন? আমি কতক্ষন ধরে বসে আছি আর আপনারা এলেন এখন?”
এই বলে সঙ্গীতা সুন্দর এক ভুবন ভোলানো হাসি দিলো, যা দেখে অয়ন একটা হার্ট বিট মিস করলো। অয়ন হাসি দেখে নিজেই বললো,
“আচ্ছা কেও কি এতো সুন্দর হতে পারে? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?”
এই সব ভাবছে। এমন সময় অয়নের বাবা বললো,
“আর বলোনা মা আমি রাস্তা ঘাট এতো চিনি না আর ট্রেন আসতে দেরি করলো তাই আমাদের দেরি হলো।”
“ইসসস সেই সকালে বের হয়েছেন আর এই ভর দুপুরে আসলেন আসুন আসুন বসুন।”
অয়ন আর ওর বাবা ঘরের ভেতর প্রবেশ করল। ঘরটা খুব সুন্দর করে ঘুছানো। ঘরে ঢুকেই দেখলো একটা মোটামুটি বড়ো ধরণের ডাইনিং রুম সেখানে সোফা ডাইনিং টেবিল আছে সেখানে একটা ডাইনিং টেবিল রাখা। আর আছে চারটা রুম। একটা সোফা রুম আর সব গুলো বেডরুম। অয়ন আর ওর বাবা ২ জনে গিয়েছিলাম সোফা রুমে বসলো। আর ওদের পাশে এসে বসলো সঙ্গীতা। সঙ্গীতা জিজ্ঞেস করলো,
“কাকাবাবু আপনি আমাদের সাথে থেকে যান আজ কালকে সকালে ট্রেন ধরবেন না হয়।”
“না না মা। আমার বাসায় অনেক কাজ আর ইট পাথরের দুনিয়া আমার ভালো লাগে না। তুমি বরং আমার এই ছেলেটার দিকে খেয়াল রেখো। তুমি তো জানোই ছেলেটার পড়ার ইচ্ছা আছে তাই এতো দূর নিয়ে আসা।”
এখন সঙ্গীতা কাকাবাবুর পাশে বসা ছেলেটিকে দেখলো। পেটানো শরীর গায়ের রং ফর্সা ৫ ফুট ১০কি ১১ তো হবেই। অয়নের ছোট বেলার ছবি
দেখেছিলো এর পর আর দেখা হয়নি কিন্তু ছেলেটা এই বয়সেই যে একটা পরিণত পুরুষ হয়ে উঠবে এইটা সঙ্গীতা আশা করেনি। সঙ্গীতা যখন অয়নের দিকে তাকালো আর ওদের চোখে চোখ পড়লো তখন অয়ন সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললো। এইটা দেখে সঙ্গীতা মনে মনে হেসে ফেললো কিন্তু প্রকাশ করলো না। সঙ্গীতা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে অয়নকে জিজ্ঞেস করলো
“কেমন আছো অয়ন?”
“ভালো।”
অয়ন তখনও মাথা নত করে বসে আছে। অয়নকে দেখে বুঝা যাচ্ছে ও অনেক লজ্জা পাচ্ছে তাই ওকে আর ঘাটালো না। সঙ্গীতা বললো,
“চলুন কাকা আপনাদের রুমটা দেখিয়ে দিচ্ছি। আপনারা একটু ফ্রেশ হয়ে নিন আর ততক্ষনে সূর্য এসেছে পড়বে।”
অয়ন আর ওর বাবা রুমে আসলো, রামটা আহামরি বড়ো না হলেও একজনের জন্য বেশ বড়ো। যাইহোক অয়নের বাবা চলে গেলেন ফ্রেশ হতে। অয়ন রুমে আসার সাথে সাথে দেখেছে এই রুমের আসে লাগোয়া একটা ব্যালকোনি যা দিয়ে সুন্দর বাতাস আসে আর মাঝে মাঝে পড়া থেকে বিশ্রাম নিয়ে একটু বসার জন্য এটার চেয়ে উত্তম জায়গা আর হতে পারে না। ভালোই লাগলো অয়নের রুমটা। অয়ন একটু দেখার জন্য বারান্দায় গেলো। সামনে কিছু গাছ পালা আছে। যা এখন কলকাতায় দেখা অনেক কঠিন তাও যে এখানে দেখার যাচ্ছে এইটা বা কম কি। অয়ন দেখতে লাগলো এই ইট পাথরের দুনিয়া। নিজের গ্রামের মাঠ থেকে পড়ার জন্য ও আজ এই ইট পাথরের শহরের বন্দি। এইসব ভাবছিলো আর এর মধ্যেই অয়নের বাবা অয়নকে ডাক দিল, ফ্রেশ হয়ে নেওয়ার জন্য। অয়ন তাড়াতাড়ি করে ফ্রেধ হয়ে নিলো আর একটা গেঞ্জি আর শর্ট পড়ে নিলো। সূর্যদা আসতে আরো কিছু সময় বাকি তাই নিজের ব্যাগ থেকে বই গুলো বের করে রুমেই রাখা একটা টেবিলে গুছিয়ে রাখতে লাগল। এমন সময় সঙ্গীতা ঘরে এলো,
“কাকা আসুন খাবার বাড়ছি।”
এই বলে সঙ্গীতা চলে গেলো। ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখল সূর্যদা বসে আছে। অয়ন সাথে সাথে গিয়ে সূর্যকে জড়িয়ে ধরল , সুর্যও অয়নকে জড়িয়ে ধরলো, আর হেসে দিয়ে বললো,
“কিরে অয়ন কেমন আছিস অনেক বড় হয়ে গেছিস তো দেখি? ”
“ভালো আছি দাদা তুমি কেমন আছো?”
“আমিও খুব ভালো আছি। এখন থেকে আমি তোমাদের সাথেই থাকব।”
” হ্যাঁ, জানি জানি শুনে খুব ভালোই লাগলো থাক তুই আমাদের কাছে। ”
তারপর সূর্য অয়নকে ছেড়ে দিয়ে অয়নের বাবাকে জিজ্ঞেস করল,
” কেমন আছো কাকু ভাল আছো তো? খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করছো না মনে হয় একদম শুকিয়ে গিয়েছো। ”
এই কথা শুনে অয়নের বাবা হেসে দিল, আর বলল,
” ভালো আছি রে খোকা, এই মাঠে-ঘাটা একটু কাজ করতে হয় এই আর কি। ”
সূর্য সাথে সাথে বলল,
” বসো বসো আর দেরি করো না, অনেক দূর থেকে এসেছো , সকালের পর মনে আর কিছু পেটে পারেনি চলো খাওয়া শুরু করি। ”
এই বলে সবাই খাওয়া শুরু করল সঙ্গীতাও ওদের সাথে বসে পড়ল। খাওয়ার টেবিলে হলো না না আড্ডা সে কি কথা। অনেকদিন পর কাকা তার ভাতিজাকে পেয়েছে কথা থামছেই না তাদের।
নানান গল্পের মাঝেই খাওয়া শেষ করল অয়ন।
তারপর সবাই একসাথে লিভিং রুমে গিয়ে বসলো।
তখন অয়নরের বাবা বলতে শুরু করল,
” সূর্য বাবা জানিস তো আমি বেশি পড়ালেখা করিনি। তাই আমার এই সম্পর্কে জ্ঞানও কিছুটা কম। কিন্তু আমার ছেলেটা বড্ড মেধাবী তুই তো জানিস আমার ছেলেটা এখানে কলেজে ভর্তি হতে চায় কিন্তু তার জন্য নাকি কোচিং করতে হবে গ্রামে তো সেই কোচিং নেই তাই আমি বাধ্য হয়ে তোর কাছে নিয়ে আসলাম। আমি চাইছিলাম যে তোদের কাছে কয়েকটা মাস থাকুক ও কলেজে চান্স পেলেই আমি ওকে নিয়ে যাব। ততদিন তুই তোরে একটু দেখ তোদের কাছে রাখ তোদের কাছে পড়া। এটুকু করতে পারবি বাবা।”
তখন সূর্য বলে উঠলো,
“আরে কাকা কি করছো তুমি , কেন পারবো না আমি পারবো , আমি অয়নকে দেখে রাখবো আর আমি তো জানি অয়ন কতটা ভালো ছাত্র। আমি এইখানে ওকে এক নামকরা কোচিং এ ভর্তি করে দেবো ও খুব ভালো মতো পড়তে পারবে। তুমি একদম চিন্তা করো না।”
এই কথা শুনে অয়নের বাবার চোখে পানি চলে এলো, আর বলল
” তুই বাঁচালি আমাকে বাবা। ”
সঙ্গীতা পাশে থেকে বলে উঠল,
“আপনি চিন্তা করবেন না কাকা, অয়নকে আমরা দেখে রাখবো ওর কোন কিছুর কমতে হবে না।”
অয়নের বাবা শুনে খুব খুশি হলেন। আড্ডা জন্য আর অনেকক্ষণ দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেলো। অয়নের বাবা তখন বললো,
“আমি রওনা দেই তাহলে না হলে ট্রেন টা মিস করবো। ”
সূর্য হওয়া সঙ্গীতা অনেক রিকুয়েস্ট করার পরও বাবাকে রাখতে পারল না। তাই না পেরে সূর্য একটা ট্যাক্সি বুক করে দিল এবং ট্যাক্সিটাকে ট্রেন স্টেশনে নামিয়ে আসতে বলল, অয়নও ওর বাবার সাথে গেল ট্রেন স্টেশনে। সেখানে গিয়ে অয়ন ওর বাবাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে তারপর বাড়ি ফিরলো।