18upchoti !

Enjoy daily new desi sex stories at 18upchoti erotic literature forum. Also by creating an account here you will get exclusive access to features such as posting, discussion, & more. Feel free to sign up today!

Register For Free!
  • Activate dark mode by clicking at the top bar. Get more features + early access to new stories, create an account.

বাংলা চটি গল্প সেন্টমারটিনে দেবীভোগ

  • Thread Author

পর্ব ১ - Part 1​

পান্নানীল জলরাশি ফোঁস ফোঁস শব্দ তুলে বারবার আছড়ে পড়ছে ফেব্রুয়ারি সকালের তেরছা সূর্যালোকে ঈষৎ উজ্জ্বল বালুময় সৈকততীরে। বালিতে তার ক্ষণিক অস্তিত্তের চিত্র এঁকে এরপর ধীরপায়ে ফিরছে নোনাজলের অশেষ উৎস পানে। পরক্ষনেই আবার উঁচু হয়ে ফণা তুলে সৈকতে তার প্রত্যাবর্তন, বালিতে প্রকট নতুন রেখাচিত্র। ঘুম ভাঙা অবধি জল ও তটের এই খেলাই দেখছিল অনিক, সানলাউনজারে আধশোয়া থেকে। সূর্যোদয় দেখবার ইচ্ছে থাকলেও আজ তা দেখা হোল না, কিছুটা দেরিতে ঘুম ভেঙেছিল তার। কাল সন্ধ্যেবেলা বিকেলের জাহাজে তারা সেন্টমারটিন পৌঁছেছে । হোটেল বুক করাই ছিল, ফেরিঘাটে নেমে বাজার হয়ে সোজা পশ্চিম বীচের সূর্যাস্ত রিসোর্টে উঠেছে। খাওয়া দাওয়া সেরে ক্লান্ত থাকবার কারণে ঘুমিয়ে পড়েছিল দ্রুত, আর সকাল অবধি পশ্চিম বীচে সাগরসূর্যের মিষ্টি রোদ আর হালকা হাওয়ার মাঝে থেকে বেশ ফুরফুরে লাগছিল অনিকের। ঘণ্টাখানেক সমুদ্রজলের আসা যাওয়া দেখতে দেখতে আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার।

“অনিক, এই অনিক ঘুমিয়ে পড়লি নাকি”
চোখ খুলে অনিক দেখল সামাদ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনিক চোখ ঘষে বলল, “নারে এই একটু চোখ লেগে এসেছিল।”
সামাদ সামনে ঝুকে অনিকের কাঁধে হাত রেখে বলল, “চল কিছু খেয়ে আসি, মাসুদ ব্যাটাও উঠে পরছে।”
অনিক উঠে পড়ে সামাদের সাথে হাঁটতে শুরু করল।
“অনেকদিন থেকেই সাগরপাড়ে আসতে চাচ্ছিলাম। আজ অনেক ভালো লাগছে।”
সামাদ বলল, “সাগর আমারও ভালো লাগে, তবে এবারের ছুটিতে পাহাড়ে যাবার মন ছিল। তোর জোরাজুরিতেই শেষে কিনা এখানে এলাম।”
“জানিনা কেন, কিছুদিন থেকে মনে হচ্ছিল সাগর যেন আমাকে তার কাছে টানছে; ঠিক সাগরতীরের বালুকনার মতো স্রোত আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের বুকে, বাধা দেয়ার যেন কোন সামর্থ্যই আমার নেই।”
সামাদ শ্লেষের সুরে বলল,”কি আর করা, কেউ তো আমাকে আর তোর মতো বুকে টেনে নিবেনা। তোর মতো কবিতাও তো কাউকে শোনানো হয়না।”
রিসোর্টের সামনে মাসুদকে দেখা গেল; সে তাদের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল, “কি রে শালা, কই ছিলি! খিদায় আমার কাহিল অবস্থা। মাছ ভাজা যে কয়টা সাবার করতে ইচ্ছে করছে, দেখিস ব্যাটা।”
ক্যান্টিনের দিকে এগুতে থাকল ওরা। একটা ফাকা টেবিলে বসে ওয়েটারকে ডেকে মাসুদ খাবার অর্ডার করল। মাসুদ আয়েশ মতো চওড়া হয়ে বসে বলল, “কি রে অনিক, কখন বেরিয়েছিলে রুম থেকে?”
অনিক বলল,”এই ভোরের কিছু পরেই হবে।”
“সমুদ্র দেখে কবিতা-টবিতা কিছু লিখে ফেললি নাকি।”
সামাদ ঈষৎ হেসে বলল,”ও কবিতা কি লিখবে রে, গিয়ে তো দেখি রোদের মধ্যে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। স্রোতের আওয়াজে বিহ্বল হয়ে পড়েছে কিনা।”
এর মাঝে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেল। মাসুদ বেশ পেটুক গোছের, খিদে লাগলে প্রচুর খেতে পারে। মাসুদের গোগ্রাসে মাছ ভাজা খাবার ব্যাগ্রতা দেখে অনিক আর সামাদ হাসতে লাগল। খাওয়া হয়ে গেলে তিনজন বীচের দিকে এগুতে থাকে।

বীচে পৌঁছে তিনজনই একদৃষ্টিতে সমুদ্র দেখতে থাকল। জোয়ার তখন অনেকটাই কমে এসেছে, স্তিমিত ধারায় জল তটে এসে পড়ছে। খানিক বাদেই তিন বন্ধু মিলে খুনসুটিতে মেতে উঠল, সাগরপাড় হতে বিপরীতের ঝাউ গাছে ভরা টিলা পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি, বীচ বল নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকল। সূর্য তখন মাথার উপর উঠতে শুরু করেছে; সকালের মিষ্টি লাজরক্তিম বর্ণ ছেড়ে গনগনে হলুদ বর্ণে তাপ বিকিরণ করে সমস্ত প্রকৃতিকে জীবনীশক্তি দানের নৈমিত্তিক রুপ ধারন করেছে। তিন বন্ধুই সাগরসূর্যের তাপে ঘামতে থাকলে তাদের টিশার্ট খুলে ফেলে। সাগরপাড়ে তখন অনেক টুরিস্ট ভিড় জমিয়েছে, তাদের মাঝে অনেকে এই শার্টখোলা ছেলেদের আনন্দক্রীড়া একদৃষ্টিতে দেখছিল। তাদের মাঝে তরুণী আর মাঝবয়সী মহিলাদের চোখ দুটো যেন ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বার বার এই ছেলেদের উপরি ঘোরাফেরা করছিল, আর তাদের সিংহভাগেরই দৃষ্টি অনিকের প্রতি।

অনিকের গৌরবর্ণ, লম্বা, নিয়মিত জিম করা চওড়া কাঁধের বলশালী দেহকাঠামো যেকোনো বয়সী মহিলাকেই তার দিকে ফিরে তাকাতে বাধ্য করে; সাথে তার মুখশ্রীও সুগঠিত এবং মায়াকাড়া; টানা টানা চোখ, ধারালো ছুরির ন্যায় নাক, তীক্ষ্ণ চোয়াল; নারীদের পরম আকাঙ্ক্ষার দেবমূর্তি হিসেবেই অনিক যেন তাদের সামনে ধরা দেয়। স্কুল কলেজের মেয়েবন্ধুদের আর চাকুরীক্ষেত্রের মেয়ে কলিগদের মাঝেও অনিকের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে; সেটার জন্যে শুধু তার দেহগড়নই দায়ী নয়, অনিকের কবিতা লেখার হাতও বেশ চমৎকার। কলেজে থাকতে সহপাঠিনীরা তার চোখের মায়ায় আবিষ্ট হয়ে রবি ঠাকুরের মানসসুন্দরি কিম্বা ভৈরবীর গান শুনতে শুনতে কতবার যে সম্মোহিত হয়ে নিজেদের শুভবুদ্ধি হারিয়েছে তার সঠিক হিসেব কেউ বলতে পারবেনা। অনিকের বন্ধুদের তার এই জনপ্রিয়তা দেখে গা জ্বলে গেলেও, অনিক এসব বিষয় তেমন পাত্তা দিতো না, মেয়েদের ব্যাপারে সে বরাবরই উদাসীন। মাসুদ বীচের মেয়েদের দৃষ্টিরেখা লক্ষ্য করে দৌড় থামিয়ে সামাদকে উদ্দেশ্য করে বলল, “কি রে সামাদ দেখতেছিস, মেয়েগুলো সব কেমন হা করে অনিককে গিলতেছে।”

সামাদ এতক্ষণ একমনে খুনসুটিতেই মেতে ছিল, এখন ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েদের ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি দেখে বলল, “এ আর নতুন কি, অনিককে কি আমাদের বান্ধবীদেরই কেউ ছাড়ত! অনিক যদি মুখ ফুটে কিছু বলত তো তখনি ওর কোলে ঢলে পড়ত, আর কতজন যে পড়েছে তার হিসেবও কি আমরা জানি নাকি, অনিক তো মেয়েদের সম্পর্কে কিছুই বলতে চায়না। মেয়েদের থেকে তো ও গা বাঁচিয়েই চলল সারাজীবন।”

“তবে সামাদ, আমি কথায় কথায় শুনেছি যে কলেজে থাকতে রায়হান নাকি আসাদচত্বরে দীপ্তিকে অনিকের বুকে ঢলে পড়তে দেখেছিল।”
“হুম এমন কথা আমিও কিছু শুনেছি, কিন্তু সেটা স্নেহার ব্যাপারে; স্নেহা নাকি গার্ডেনে কবিতা শুনতে শুনতে অনিকের কাঁধেই হেলে পরেছিল, একদম মূর্ছা যাওয়ার মতো ব্যাপার। অনিক নাকি বহু কষ্টে সামলেছিল ওকে।”

সামাদ আর মাসুদ বীচের মাঝে দাড়িয়ে কথা বলছিল, অনিক তাদের থেকে দূরে স্রোতের মাঝে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রেখে আবার তাদের দিকে ফিরে আসছিল। সামাদ অনিকের ঘামে ভেজা রোদে চিকচিক করে রুপোলী আলো ছড়ানো শরীরের দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে মাসুদকে বিড়বিড়িয়ে বলল, “ঈশ্বরের এমন এক অপরুপ শিল্পকে মেয়েরা যে এমন অস্থির হয়ে কাছে চাইবে তাতে আসলে অবাক হবার কিছু নেই, সুন্দরকে সবাই আপন করেই পেতে চায়।”

ইতোমধ্যে অনিক ওদের কাছে চলে আসায় মাসুদ আর সামাদ এই বিষয়ে কথা বলা বন্ধ রাখে। ওরা জানে অনিক এসব ব্যাপারে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেনা; স্কুলজীবন থেকেই ওরা তিনজন ভালো বন্ধু, একে অপরকে নিজেরা বেশ ভালমতই চিনে। তিনজনই এরপর সমুদ্রে গিয়ে ডুব দেয়, নোনা জলের ঢেউ তাদের উপর বয়ে গেলে ধাক্কা লেগে কিছুটা পিছিয়ে পড়ার এবং মাধ্যাকর্ষণ বলের দুর্বলতায় ভেসে বেড়ানোর অনুভূতি হয় তাদের; একজন আরেকজনকে পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে মজাও করতে থাকে। ঘণ্টা খানেক পানিতে কাটিয়ে তারা হোটেলে ফিরে আসে। গোসল করে তিনজনই তাদের রুমে রেস্ট নেয়।

সেন্টমারটিনে কিছুদিন ছুটি কাটাবার জন্যে তিন বন্ধু রিসোর্টের একটি রুমই ভাড়া নিয়েছে । বেশ বড়সড় রুমটি, তিনটি বিছানা পাতা, রুমে ঢুকে সোজা কিছদুর এগুতেই স্লাইডিঙ দরজা খুললেই পরিষ্কার সমুদ্র দেখতে পাওয়া যায়। ছুটি কাটাবার পক্ষে বেশ ভালো ব্যবস্থা। কিছুক্ষণ পর সামাদ উঠে বারান্দায় গিয়ে তার গার্লফ্রেন্ড রিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতে থাকে। রিয়া সামাদের সাথে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ত, সামাদের মালটিন্যাশনালে চাকরি হয়ে যাওয়ায় সামনে কিছুদিনের মাঝে বিয়ে করার চিন্তা করছে। সামাদ রুমে ফিরে আসলে তিনজনই ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে বের হয়।

ক্যান্টিনে এসে তারা রূপচাঁদা মাছ ভাজি, সসে ডোবানো করাল মাছ অর্ডার দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে শুরু করে। মাসুদের মাছ ভাজা খাওয়া দেখে অনিক তাকে একটু সবুর করতে বলে এই বলে যে রাতে সাদা করাল মাছের বারবিকিউ খাওয়া হবে, তার জন্যে একটু জায়গা রাখতে। মাসুদ চোখ পাকিয়ে বলে, “এই শালা, খাওয়া নিয়ে কিছু বলবিনা, বলে দিলাম। আর বারবিকিউ নিয়ে তোর ভাবতে হবেনা। পারলে পুরো মাছটাই আমি একা খাব।”

মাসুদের কথায় ওরা দুজনই হাসতে থাকে। খাওয়া শেষ হলে ওরা বাজারের দিকে হাঁটতে থাকে। বাজারে পৌঁছে ওরা দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে; সেন্টমারটিনের বাজারটা বেশ ছোট, বেশিক্ষন সময় লাগেনা তাদের পুরো বাজার ঘুরে দেখতে। সূর্য তখনও মধ্যগগণ থেকে খুব বেশি হেলে পরেনি, তারা ঠিক করে সাইকেল চেপে দ্বীপটি ঘুরে দেখবে।

সাইকেল ভাড়া নিয়ে বাজার হতে সোজা দক্ষিন দিকে পূর্ব বীচ সংলগ্ন রাস্তাটি বরাবর তারা এগুতে থাকে। রাস্তা বরাবর এগুতে এগুতে তারা প্রায় সৈকতের ধারেই এসে পরে; জেলেদের মাছধরা নৌকোগুলো সাগরতীরে নোঙ্গর ফেলা ছিল। ছোট ছোট নৌকোগুলোর মাঝে দুএকটা কিছুটা বড় আকারের, কতগুলোতে বেশ উজ্জ্বল রঙের হাতে আঁকা কারুকাজ করা। তারা বীচে নেমে সেগুলো দেখতে লাগল, নৌকোগুলোর পাশে দাড়িয়ে কিছু ছবিও তুলল। তারপর আবার সাইকেল চেপে দক্ষিণে এগুতে থাকল সৈকতের উপর দিয়েই। কোথাও বালি বেশি থাকবার কারণে মাঝেমধ্যে এগিয়ে যেতে বাধা পেলেও, অনেকটা সাবলীলভাবেই তারা সাইকেল চালিয়ে এগুতে থাকল।

সমুদ্রের জলরাশি এত কাছাকাছি দেখতে দেখতে যাওয়ার কারণে অনিকের মনে হতে লাগল যেন জলরাশির একটু উপর দিয়েই অদৃশ্য কোন ভাসমান যানের উপর চেপে সে ভেসে চলেছে, নিজেকে অনেক হালকা মনে হতে লাগল তার, নগরের যান্ত্রিক জীবনধারা ছেড়ে যেন অন্য এক জগতে চলে এসেছে, যেখানে কোন ছুটোছুটি নেই, কোন ভার নেই, সবকিছুই এই জলরাশির মতো আপন নিয়মে আপন সময়ে এগিয়ে যাচ্ছে; চারিদিকেই যেন এক অপার সৌন্দর্য, এই ছলকে চলা স্রোতের মতো সবই যেন এক অশেষ যৌবন সৌন্দর্যে ভরা। সাগরতীরের আশেপাশের সব কিছুই, সেই ছোট ছোট ছড়ানো ছিটানো ঝাপিতোলা দোকনগুলো, চারপাশে দাড়িয়ে থাকা সার সার ইউক্যালিপটাস আর আমগাছগুলো, সাগরতটে দাড়িয়ে থাকা নারিকেল গাছগুলো যেন, নব আবিষ্কৃত তার এই নন্দন্দদৃষ্টিতে , এক মায়াবি স্নিগ্ধ রুপের জগত তৈরি করতে থাকে।

বি,দ্রঃ পাঠক-পাঠিকাদের গল্প পছন্দ হলে এর পরবর্তী সংস্করন প্রকাশ করব। কমেন্টে মতামত জানান।
 
Administrator
Staff member
Joined
Mar 16, 2024
Messages
1,167

পর্ব ২ - Part 2​

এগুতে এগুতে তারা গলাচিপাতে এসে পরে। সামাদ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে, “আমরা গলাচিপায় তো এসে পরেছি, ছেঁড়া দ্বীপ ও বেশি দূর হবার কথা না। কি বলিস যাবি নাকি ছেঁড়া দ্বীপ?”

অনিক চারদিক দেখে বলল, “চল কিছুদূর সামনে যাই, এখানে তো কাউকে দেখছিনা, সামনে কারো দেখা পেলে জিজ্ঞেস করে নেব ছেঁড়া দ্বীপে আজ যেতে পারব কিনা।”
এই বলে তারা সাইকেলে এগুতে থাকল। গলাচিপা থেকে কিছুটা সামনে গিয়েই দেখল মেইন রোডের ধারে একটি ১০-১১ বছরের শিশু এবং একটি কিশোরী কিছু কড়ি নিয়ে খেলছিল। সাইকেল ঘুরিয়ে যখন তারা ছেলেমেয়ে দুটোর দিকে এগুল, তখন খেলা ছেড়ে ছেলেমেয়ে দুটো দাঁড়িয়ে তাদের দিকে ঘুরে তাদের দেখতে লাগল। ওদের সামনে সাইকেল থামিয়েই মাসুদ বলল, “বাবু একটু শুনো তো।”
মাসুদের কথায় শিশুটি কিছুদূর এগিয়ে আসলো।
“জ্বি বলেন”, কিছুটা গ্রাম্য টানেই বলল শিশুটি।
“আচ্ছা ছেঁড়া দ্বীপ এখান থেকে কতদূর হবে বলতে পারবে।”
শিশুটি মাথা চুলকে বলল, “দূর আছে। সাইকেল নিয়ে গেলে একটু তাড়াতাড়ি হয়।”
তার উত্তরের কোন প্রাসঙ্গিক মানে বের করতে না পেরে মাসুদ ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দিকে চাইল। এমন সময় মেয়েটি এগিয়ে এসে বললে, “বাবুরা, আপনারা কি বাজার থেকে আসছেন?”

অনিক সাইকেলে বসা অবস্থায় মেয়েটির দিকে ঘুরে তাকাল, গলাটা কেমন যেন রিনঝিনে স্বচ্ছ কাচের মতো এসে বাজল তার কানে; মনে হল হাজার বেলোয়ারি চুড়ি একসাথে ভেঙে পড়ে তার কর্ণকুঠরে বেজে উঠল। সামাদ সাইকেলে বসা অবস্থায় গলা চড়িয়ে বলল, “হ্যা, বাজার থেকেই আসা হচ্ছে।”
মেয়েটি দুহাতে তার ঘোমটাটা কিছুটা সরিয়ে এরপর সামাদের দিকে চোখ তুলে বলল, “বাজার থেকে যতটা পথ এসেছেন তার থেকে কিছুটা বেশি যেতে হবে।”
মেয়েটির গলার স্বরে মোহাবিষ্ট হয়ে অনিক পলকহীন চোখে তাকে দেখতে লাগল। মেয়েটি কিছুটা পিছনে গাছের পাতার আড়ালে থাকায় এতক্ষণ তার অবয়ব পরিষ্কার দেখা যায়নি, এগিয়ে আসায় এখন তাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দূর থেকে দেখায় মেয়েটিকে কিশোরী মনে হলেও সে ঠিক কিশোরী নয়, কৈশোর আর তারুণ্যের মাঝের কোন এক সন্ধিক্ষণে এসে সময় যেন থমকে আছে তার দেহে। মুখের আদলটা ঠিক পূর্ণিমার চাঁদের মতো, চোখ দুটো পদ্মপাতা আকারের আর তাদের থেকে স্পষ্ট বুদ্ধির একটি দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ছে, ঠোঁট দুটো যেন গোলাপের পাপড়ি। প্রথম দৃষ্টিতে একে লক্ষ্মী প্রতিমা ভেবে ভুল করলে দেবীর অশ্রদ্ধা হবে বলে মনে হয়না, বরং এমন সৌন্দর্যের অনুকরণেই যে দেবীদের উদ্ভব সেই বোধই মনে জাগে।

অনিক, মাসুদ আর সামাদ পরস্পরের মাঝে পরামর্শ করতে থাকে যে ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে এখন এগুনো উচিত হবে কিনা। মেয়েটি তাদের কথার মাঝে মোলায়েম স্বরে বলে উঠে, “বাবুরা আপানারা কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলি। আপনাদের এখন যাওয়া ভালো হবেনা, সূর্য প্রায় পশ্চিমে হেলে পড়েছে আর এখন সময়টাও জোয়ারের। আপনাদের দক্ষিণ পাড়া পেরিয়ে আবার ফিরে আসতে হবে, সামনে সব জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকবে।”
একনিশ্বাসে কথগুলো বলে মেয়েটি অনিকের দিকে তাকাল। এতক্ষণ অনিকও তাকে দেখছিল, মেয়েটি তার আশ্চর্য ভাবেভরা চোখে তার দিকে তাকাতেই অনিক ইতস্তত করে শিশুটির দিকে ঘুরে তার সাথে আলাপ শুরু করে দেয়-
“কি খোকা, তোমার নাম কি?”
“জসীম”
“বাহ সুন্দর নাম তো, স্কুলে পড় তুমি?”
শিশুটি ঘাড় হেলিয়ে বলে সে ক্লাস ৫ এ পড়ে।

অনিক হাঁটু মুড়ে বসে জসীমের গাল টেনে বলল,”বেশ তো, এই পড়ন্ত বেলায় এখানে কি করছিলে খোকা?”
মেয়েটি এতক্ষণ অনিককে বেশ সতর্ক চোখে পর্যবেক্ষণ করছিল। এবার অনিককে উদ্দেশ্য করে ভেজা গলায় বলল,”আমরা নজরুল পাড়ায় আমাদের মামা বাড়িতে এসেছি, বিকেলে বাজারে যেতে হবে তাই ভাইকে নিয়ে একটু আগেই বের হয়ে এলাম তাকে সাথে নিয়ে কিছুদূর বেড়াবার জন্যে।”
জসীমকে দেখে অনিকের কিছুতেই বিশ্বাস হতে চায়না সে এই মেয়েটির ভাই। মাসুদ জিজ্ঞ্যাসু চোখে প্রশ্ন করে,”ও কি আপনার নিজের ভাই?”
মেয়েটি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,”না, আমার নিজের ভাই না, মামাতো ভাই।”
অনিক এবার কিছুটা যুক্তি খুজে পায়। সামাদ এরপর মেয়েটির নাম জানতে চায়।
মেয়েটি সংক্ষেপে উত্তর দেয়, “জয়া।“

জয়া, জয়া- মন্দিরের পিতলঘণ্টার মতো একটানা নামটি ধ্বনিত হতে থাকে অনিকের বুকে। ঘুরেফিরে মেয়েটির মুখনিঃসৃত এই নামটিই তার দুকানের এক প্রান্ত হতে আরেক প্রান্তে বাঁশির মনভোলানো সুরের মতো বিনা বিরতিতে বাজতে থাকে। তার বোধ হয় খামে সিল বসানোর মতোই এই নাম কেউ যেন তার বুকে চেপে বসিয়ে দিয়েছে, এর থেকে পরিত্রানের যেন কোন পথই খোলা নেই।

অনিক তার দুই বন্ধুসহ সাগরপারে গিয়ে বসে থাকে। মাসুদ আর সামাদ বাড়ন্ত জোয়ারের স্রোত নিবিষ্ট চিত্তে দেখতে থাকে, কিন্তু অনিকের বুকে যেন একটানা দামামা বেজেই চলেছে, সে কোথাও মনোনিবেশ করতে পারছেনা; বারবার পিছন ফিরে জয়াকে দেখছে । জয়া পুনরায় তার ভাইকে নিয়ে কড়ি খেলতে বসেছে। অনিকের পুরো চিত্ত জুড়ে এখন শুধু একটিই রিনরিনে স্বচ্ছ গলার সুর “জয়া”, কিন্তু অনিক দেখে জয়া পুরোপুরি নির্লিপ্ত; তার অদূরেই তাকে কেন্দ্র করে সমুদ্রপ্রান্তে যে এক দুরন্ত ঝড়ের সমাগম হয়েছে তার কোন আভাসই যেন জয়াকে স্পর্শ করছেনা। অনিক জয়াকে ভালমত খুঁটিয়ে দেখে; বাংলা কায়দায় সবুজ-হলুদ একটি ডুরে শাড়ি পড়েছে মেয়েটি, সাথে সবুজ ব্লাউস; ভাবে কতই বা বয়স হবে, ১৬ থেকে একদিনও বেশি হবে বলে মনে হয়না। কিন্তু এই উঠতি বয়সেই রপের এই সমাহার, এই মোহনীয় উপস্থিতি এমনি আচ্ছন্ন করেছে অনিককে যে সে আর সোজা ভাবতে পারছেনা, তার ভাবনাগুলো গুলিয়ে আসছে।

সূর্যাস্তের সময় হয়ে এসেছে, অনিকদের দ্রুত ফিরতে হবে কারন পূর্ব বীচের এদিকে বৈদ্যুতিক আলো না থাকায় সূর্যাস্তের পরপরই চারদিক দ্রুত অন্ধকার হয়ে আসে। তারা উঠে দাড়িয়ে সাইকেলের উপর চেপে যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়। অনিক ঘাড় ঘুরিয়ে জয়ার দিকে তাকায়; দেখে জয়া তার দিকেই তাকিয়ে আছে। গোধূলিলগ্নের উদ্ভাসিত হ্যাজাক বাতির মতো আলোয় জয়ার কোকিল-কালো চোখে বেদনাক্রান্ত অস্ফুট ঘন হয়ে আসা এক আর্তি যেন সে দেখতে পায়। অনিক লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে জয়াকে উদ্দেশ্য করে এই প্রথম তার ভারী পুরুষালি কণ্ঠে বলে উঠে, “জয়া, আমরা তাহলে আসি।”
“দাদাবাবু, আপনারা কি বাজারে যাচ্ছেন?”, চকিত প্রশ্নটি করে বসে মেয়েটি।
“হ্যা, বাজার হয়েই তো যেতে হবে।”

মেয়েটি এক মুহূর্ত নিচে তাকিয়ে কি একটা ভেবে নিয়ে বলে,”দাদাবাবু আমাকে বাজার পর্যন্ত একটু এগিয়ে দিবেন?”

অনিক কিছু বলেনা, মূর্তির মতো জয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সামাদ জয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, “তা কি করে হবে জয়া, সাইকেলগুলোতে বসার তো তেমন কোন জায়গা নেই।“
আসলে তারা যে সাইকেলগুলোতে চেপেছিল সেগুলো ছিল ক্যারিয়ার বিহীন দুরন্ত ব্র্যান্ডের। সামদের এই অভিযোগে জয়ার শান দেয়া কাস্তের মতো টানা কালো ভ্রুযুগল কিছুটা কুঞ্চিত হয়ে কপালে অস্পষ্ট কিছু রেখা উৎপন্ন করে। জয়ার মুখের এই উদ্বিগ্ন ভাবের মধ্যেও এক অনন্যদৃষ্ট সৌন্দর্যের আভাস পেয়ে অনিক বিহ্বলের মতো তাকে দেখতে থাকে। অনিকের মনে হয় এই উদ্বিগ্ন, কুঞ্চিত ভ্রু মুখভঙ্গিতে জয়াকে যেন স্ফুটনোন্মুখ এক জবার মতো লাগছে,নিজের পরিস্ফুটনের সম্ভাবনায় যে ব্যাকুল হয়ে আছে। এর মাঝে জয়ার পিছন থেকে তাকে পাশ কাটিয়ে জসীম দৌড়ে এসে সামাদের সাইকেলের কাছে গিয়ে সামাদকে কিছু বুঝতে না দিয়েই তার লাল-কাল সাইকেলের সীটের সামনে হাতল ধরে লাফিয়ে সেটার উপর পাশ ফিরে বসে পড়ে। সামাদ থতমত হয়ে জসীমকে বলল, ”এই খোকা, করছ কি তুমি!”

জসীম হাসি হাসি মুখে মাথা ঘুরিয়ে সবাইকে দেখে বলল , ”সাইকেলে চড়লাম, চল টেনে নিয়ে চল এবার।“
জয়া লজ্জিত হয়ে জসীমের দিকে মাথা উচিয়ে শাসিয়ে বলল, “এই জসীম, নেমে আয় বলছি। বাবুদের বিরক্ত করিস না। “
জসীম নেমে আসে না বরং সামনে হেলে পড়ে হ্যান্ডেল ধরে বসে থাকে। নিজের প্রতি জসীমের এই উদাসীনতা লক্ষ্য করে জয়া বলল, ”আসলে ওর সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াবার খুব শখ তো তাই সাইকেলে উঠলে আর সহজে নামতে চায়না।“

মাসুদ এর মাঝে বলে বসল, “তো থাকুক না জসীম সাইকেলে, ওকে আমরা কিছুটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। কি জসীম, যাবে আমাদের সাথে?“
জসীম মাসুদের দিকে তাকিয়ে বলে যে সে সাইকেলে ঘুরবে, কিন্তু সাথে দিদিকেও নিতে হবে।

জয়া সাফাই গাওয়ার মতো করে বলল, “আসলে নতুন কারো সাথে একা কোথাও গেলে ও ভয় পায়, কান্না করে, পরিচিত কেও থাকলে ভালো হয় আরকি।“
সামাদ এরপর কিছুটা বিরক্তি চাপা দিয়ে বলল, “আপনাকে কি করে নিয়ে যাই বলুন তো, একে তো সাইকেলে বসার মতো ব্যাবস্থা নেই, আর তাছাড়া আপনার পরিচিত কেউ আমাদের সাথে আপনাকে দেখলেও বা কি ভাববে।“

জয়া বলল, “আসলে সন্ধ্যার সময় এদিকে গাঁয়ের তেমন কেউই আসেনা, এদিকটা ফাঁকাই থাকে; মাঝিরা তাদের নৌকা নিতে বের হয় মাঝরাতের আগে আগে, আর আপনারা আমায় বাজার পর্যন্ত এগিয়ে দিলে আমার বেশ উপকার হবে, নাহয় এই লম্বা পথ একা হেঁটে যেতে হবে আমায়। আর আমার ঠিকঠাক বসার জন্যে বেশি ভাববেন না আপনারা। আমরা গাঁয়ের মেয়ে, ওভাবে সাইকেলে চেপে যাওয়ার অভ্যেস আছে আমার।“

সামাদের জয়াকে নিজেদের সাথে এভাবে সাইকেলে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায় আপত্তি থাকা সত্ত্বেও শেষমেশ জয়ার এই লম্বা পথ হেঁটে যাওয়ার অসুবিধার কথা ভেবে নিজেকে রাজি করে জয়াকে সাইকেলে উঠে পড়তে বলে।

জয়া তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে এসে অনিকের সাইকেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। অনিক জয়ার দিকে তাকিয়ে কি একটা ভেবে নিয়ে তার বাম পা খানিকটা সামনে এগিয়ে নিয়ে সাইকেলটা হেলিয়ে জয়াকে উঠতে বলে। জয়া সাইকেলের পাশে এসে পিছনে ঘুরে হাতল ধরে উঠার চেষ্টা করতেই অনিক তার অসুবিধা বুঝতে পেরে তার কোমর দুপাশে আঁকড়ে ধরে তাকে ধীরে ঝাঁপ দিতে বলে। জয়া কথামতো ঝাঁপ দিয়ে সাইকেলে উঠে পড়ে। জয়ার কোমর স্পর্শ করা মাত্রই এক অন্যরকম অনুভূতি বন্যায় নদীর উপচে পড়া জলের মতই অনিকের শরীরের প্রতিটি আনাচে কানাচে বইতে শুরু করে দেয়, বানের জলের মতই এই ভালো লাগার অনভুতি তার ভাবনার কূল ছাপিয়ে তাকে দ্রুত বেগে সিক্ত করে পিছনে ঠেলে দিয়ে তার সর্বাঙ্গ শিথিল করে ফেলে। সেই ভরপুর স্রোতের আঘাতে তার ঘাড় ঢিলে হয়ে উত্তাল সুখের স্পর্শে মাথা পিছনে হেলে গিয়ে সে সম্পূর্ণ বিবশ হয়ে পড়ে। অজান্তেই তার মনে খেয়াল জাগে যে জয়ার কোমরের দুপাশের মাংসগুলো কি নরম! একদম যেন ননী দিয়ে গড়ে চমৎকার এক আকৃতি দিয়েছেন কোন মহান কলাকুশলী পাচক। সামাদের কথায় তার সম্বিৎ ফিরে আসে। সামাদ তার দিকে তাকিয়ে বলে, “চল আগাই তাহলে। সাবধানে ধীরে ধীরে চালাস। তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই।“

অনিক তার বাম পা কাছে টেনে এনে সাইকেল সোজা করে দুহাতে হাতল ধরতে গেলে জয়ার শরীরের সাথে তার দু হাতেরই আলতো ঘষা লাগে, সামনে হেলে পড়ার কারণে অনিকের বুকের সাথেও জয়ার কাঁধে ঘষা লাগছিল। অনিক দেখতে পায় জয়া শিউরে উঠে তার কাঁধটা একটু পিছনের দিকে ঠেলে দেয়। অনিক জয়াকে জিজ্ঞেস করে সে সুবিধামত বসেছে কিনা; জয়া এর উত্তরে উঁহু বলে ঘাড় হালকা কাত করতেই অনিক তাকে হ্যান্ডেল দুহাতে শক্ত করে ধরতে বলে প্যাডেল মেরে সামনে এগুতে থাকে।

বি,দ্রঃ পাঠক-পাঠিকাদের গল্প পছন্দ হলে এর পরবর্তী সংস্করন প্রকাশ করব। কমেন্টে মতামত জানান।
 
Administrator
Staff member
Joined
Mar 16, 2024
Messages
1,167

পর্ব ৩ - Part 3​

সার সার নারিকেল গাছের মাঝে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়া রক্তিম সূর্যের লালিমা চারপাশের ভেসে বেড়ানো মেঘগুলোকে সিঁদুর রঙের আঁচলে ছেয়ে ফেলেছে, কিছু দূরে আবার সে আঁচলে পাতলা হেম বর্ণের ছটা এসে লাগছে। ডান পাশে সমুদ্রের বাড়তে থাকা জোয়ারের ফিসফিস শব্দ বারবার কানে আসে, জোয়ারের স্রোত সাগরতটে ধীর পদক্ষেপে বারংবার গা এলিয়ে দেয়; সাগরপাড়ের দিগন্তের উপর গাঢ় আঁধারনীল বর্ণের নিরুচ্ছেদ পূর্বাকাশ। সমুদ্রতীরের পশ্চিম দিকের ছায়াঘন সার সার ইউক্যালিপটাস দ্রুত সন্ধ্যারাতের কালো চাদরে চারপাশ একমনে ঢেকে ফেলার চেষ্টায় নিরত।

এই মনোরম আলোআঁধারি পাথারতীরবর্তী সন্ধ্যাপ্রকৃতির মাঝে অনিক সাইকেল চালিয়ে সৈকতের উপর দিয়ে এগুতে থাকে। প্রকৃতির এই বিচিত্র মেলবন্ধন অনিকের ছড়িয়ে পড়তে থাকা চিত্তবাগিচায় অভাবনীয় বেগে নব নব কলির পরিস্ফুটনের আয়োজন করতে থাকে, আর তার ভাবনাগুলোও যেন নতুন এক দিগন্তের সন্ধান পেয়ে সেই দিগন্তপানে তার অনুভবের তরী বিনা নোঙরেই চিরতরে ভাসিয়ে দেয়। আর এই বিরাট আয়োজন আরম্ভের পুরোধা যে সে এই মুহূর্তে তারি দুই বাহুর মাঝে, তার সামনে পাশ ফিরে সামনে মুখ করে বসে আছে।

অনিক সামনে বামদিকে ঝুঁকে থাকবার কারণে জয়ার খানিকটা সরকে পড়া ঘোমটার বাইরে তার ঘন কালো চুলের সুবাস পেতে থাকে। চম্পা ফুলের মনমাতানো সৌরভে হরিনশাবক যেমন ফুলের চারিদিকে নেশাগ্রস্থের মতো ঘুরতে থাকে, অনিকও তেমনি নিজের নাককে শিশিরবিন্দুর ন্যায় সতেজ সেই সুঘ্রানের উৎসের দিকে অজান্তেই বারবার ঠেলতে থাকে। অনিকের বাহু দুটিও জয়ার সুকুমার কোমল শরীরের সাথে বারকয়েক ঘষা খেয়ে যায়।

জয়ার সাথে যেকোন প্রকারের সংস্পরশেই তার শরীরমনে তীব্র আকাঙ্ক্ষিত ও কমনীয় কোন বস্তুর খুব নিকটে চলে আসবার এক আনন্দঘন অনুভূতি জেগে উঠছে। তবে তার এ অনুভূতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না। হঠাৎ জয়া নড়েচড়ে কিছু একটা বলে উঠতেই তার এই অন্তর্মুখী আনন্দের রঙিন জাল বেলোয়ারি চুড়ির অসংখ্য ভেঙে পড়া ছোট ছোট কাচের টুকরার ধারালো আঘাতে জাগায় জাগায় কেটে ছিঁড়ে যেতে থাকে। গভীর আত্মচেতনা থেকে নিজেকে বের করে এনে সে শুনতে পায় জয়া হাত নাড়িয়ে বলছে, “বাবু, এখানে একটু থামুন।“
অনিক ব্রেক কষে দাঁড়ায়। সামাদ আর মাসুদ ও ততক্ষণে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

তারা সবাই দাঁড়িয়ে পড়লে জয়া নেমে এগিয়ে গিয়ে সামাদের সাইকেল থেকে জসীমকে নামিয়ে নেয়। তারপর জসীমকে বলে, “হুম, তুই এখন বাড়ি যা। বাড়ির কাছে তো এসে পরেছিই, সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যা।“
জসীম মুখ ফুলিয়ে বলে, “দিদি আরও কিছুক্ষণ ঘুরব।“

জয়া তার দিকে চোখ গোল গোল করে শাসিয়ে বলে, “একদম বাঁদরামো করবিনা, এই বাবুরা কি তোকে নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকবে নাকি! ইনাদের কত কাজ আছে, যা বাড়ি যা এখন, পরে তোকে লজেন্স কিনে দেবো।“
লজেন্সের কথা শুনে খুশি হয়ে জসীম বড় রাস্তার দিকে ভোঁদৌড় দেয়। সবাই জসীমের চলে যাওয়া দেখতে থাকে। জয়া এরপর হাসি মুখে “বাঁদর ছেলে একটা” বলতে বলতে অনিকের দিকে ফিরে আসতে থাকে। অনিক আবার তাকে আগের মতই সাইকেলে তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে এগুতে থাকে।

জয়া এবার পুরো রাস্তা সোজা সামনে না তাকিয়ে থেকে কিছুদূর সামনে যেতেই অনিকের দিকে ঈষৎ মুখ ঘুরিয়ে বলে, “আমার মামা বাড়ি ওখানেই, নজরুল পাড়াতে। বাজারে তো জসীমের দরকার নেই তাই ওকে নামিয়ে দিলাম। বাসায় গিয়ে যা ইচ্ছে করক গে, নাহয় ফিরতে রাত হয়ে গেলে সারা রাস্তা জ্বালিয়ে মারত।“

জয়া তার দিকে ঘুরে তাকানোতে অনিক কিছুটা অপ্রতিভ হলেও জয়ার প্রতিমার মতো মুখ দেখতে পাওয়ায় তার বেশ ভালো লাগে, একবার দেখলে যেন বারবার দেখবার ইচ্ছে জাগে। অনিক নিজেকে গুটিয়ে না রেখে কিছুটা সামলে নিয়ে এবার জয়ার সাথে কিছু আলাপচারিতার প্রয়াস করতে লাগল। সে সাবলীলভাবে জিজ্ঞেস করে, “বাজারে কি কাজে যাচ্ছেন?”
জয়া আবার মুখ ঘুরিয়ে আড়চোখে বলে, “আমার এক মামার সেখানে দোকান আছে। তার কাছেই যাচ্ছি। কিছু টাকাপয়সার হিসেব শেষে রাতে তিনিই আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবেন।“
অনিক সব শুনে তার দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করে, “তো আপনার কি করা হয়?”
“এবার মাধ্যমিক দিলাম। কলেজে ভর্তি হওয়ার চিন্তা করছি।“
অনিক অবাক হয়, ভাবে এই এলাকায় তো মেয়েদের মাধ্যমিকই পড়ার তেমন চল নেই। তো এই মেয়ে সেখানে কলেজে ভর্তি হতে চাচ্ছে। অনিক কৌতূহল দমন করে তবুও বলে, “কোথায় ভর্তি হতে চাচ্ছেন?”

জয়া চোখ ঘুরিয়ে বলে, “চট্টগ্রাম শহরে কোথাও ভর্তি হওয়ার চিন্তা করছি।“
অনিক মুখে হাসি নিয়ে বলে, “তো চট্টগ্রাম যাবেন, বাসার কথা মনে পড়বে না? একা একা থাকতে পারবেন?”
জয়া গম্ভীর গলায় বলে, “বাসার জন্যে খারাপ তো লাগবেই। তবে এই এলাকা থেকে বের হয়ে বড় কোথাও যেতে হলে এলাকা ছেড়ে যেতে তো হবেই, নয়ত সারাজীবন এই দ্বীপে থেকেই আবদ্ধ জীবনযাপন করতে হবে।“

অনিক বুঝতে পারে জয়া এই দ্বীপের জীবনধারা থেকে বের হতে চায়। হয়ত এখানকার মানুষজন বা তাদের জীবন দর্শন তার সাথে একদমই খাপ খায় না। তাই দ্রুতই এই দ্বীপ ছাড়তে চায় সে। জয়া এবার অনিক্ কে প্রশ্ন করে বসে, “বাবু আপনি কি করেন?”
অনিক আড়ষ্ট হয়ে বলে, “আ-মি, আমি সংবাদপত্রে লিখালিখি করি।“
জয়া মুখ ঘুরিয়ে আবার অনিকের দিকে তাকায়; তার চোখ দুটো জ্বলজ্বলে; সে বলে,” সংবাদপত্রে লিখেন! তার মানে তো আপনি বড় লেখক।“
অনিক ইতস্তত করে বলে, “না তেমন কিছু না, টুকটাক লিখি আরকি।“
জয়া অনিকের কথাকে আমলে না নিয়ে দ্বিগুন উৎসাহে প্রশ্ন করে, “দাদাবাবু আপনি কি কবিতা লিখেন?”
“তেমন ভালো কিছু না, চেষ্টা করি লিখতে আরকি। আপনি কবিতা পছন্দ করেন?”

জয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। তারপর অনিক কে তার কবিতা শোনানর জন্যে অনুরোধ করতে থাকে। প্রথম দুবার ভদ্রভাবে এ অনুরোধ উপেক্ষা করলেও তৃতীয় বারের অনুরোধ অনিক ফেলতে পারেনা, সে রাজি হয়ে যায়- তাকেও যে আজ পেয়ে বসেছে তার কল্পনা ও রুপচিত্রময়তা মিশ্রিত অপার্থিব চন্দ্রকাব্যের হেয়ালি। অনিক একটু ভেবে নিয়ে তার মুখ সামনে এগিয়ে এনে জয়ার কানে কানে ধীরে ধীরে মধুর রুপরস ও তরল ছন্দের কিছু বৈষ্ণব পদাবলী আওড়াতে থাকে। সেসব শুনে জয়ার মনে বিচিত্র সব ভাবের উদয় হয়, এবং তার কিছু কিছু ভাব তার চোখে মুখেও স্পষ্ট খেলা করতে থাকে। এমনি মধুর সব ভক্তি ও প্রেম ভাবে প্রবল পদাবলী আওড়াতে আওড়াতে হঠাৎ এক বড়সড় প্রবাল তাদের রাস্তায় সমুখে চলে আসায় অনিক দ্রুত ডানে বাঁক নেয়। আর এই বাঁক নেয়ার সময়েই ঘটে যায় এক অনুনমেয় ঘটনা।

অনিকের বাম হাতের কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত পুরোটাই জয়ার স্তনের সাথে লেপটে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় জয়ার ঠোঁট দুটো আংশিক খুলে যায় এবং তার চেহারায় স্পষ্ট বিস্ময় ও যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠলেও, সে সেটা কোনোভাবে অন্যদের কানে পৌঁছুতে দেয়না। আর অন্যদিকে অনিক ধড়ফড় করে হাত সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও, যে ব্যাপক ভাললাগার অনুভব এই কিছু মুহূর্তে তার পুরো শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যায় তার প্রতিটি মুহূর্তই সে মনের স্পষ্ট বিরোধিতা সত্ত্বেও রনিয়ে রনিয়ে উপভোগ করে। প্রথমবার জয়ার কোমর ধরে ভেবেছিল সেটা যেন ননী দিয়ে মাখানো হয়েছে, আর এবারের অনুভূতি যেন তার আয়ত্তের মাঝে সব রকম উপমাকেই ছাড়িয়ে যায়। এই অনুভূতির তুল্য যেন আর কিছুই নেই; নিরুপমা জয়া, নিরুপমা তার স্তন।

অনিক সাইকেলের গতি কিছুটা সামলে নিয়ে জয়াকে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে, “ব্যাথা পেয়েছেন কি আপনি?”
জয়া হাতল ধরে আবার ঠিকঠাক ভাবে বসতে বসতে বলে, “না দাদাবাবু, আমি ঠিক আছি।“
“যাক ভালো, বাজার বোধ হয় আর খুব বেশি দূরে না।“
“হ্যা আর খুব বেশি নেই দাদাবাবু।“

অনিক এবার চুপচাপ সাইকেল চালিয়ে যায়। তার মনে শত শত বিচিত্র, অভিনব, হিল্লোলিত অনুভূতি নিয়মিত যাতায়াত করলেও সে সেগুলকে তার চেতনায় স্থান দিতে চায় না। সব পরিত্যাগ করে আশু কর্তব্যে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করে। হায়! তবু মানবেরই মন; চিন্তার জগতকে যতই শক্তভাবে নিজের মুঠোর মাঝে আঁকড়ে চেপে ধরতে চায় প্রতিবাদী হৃদয় ততোধিক দ্রুত গতিতে মুঠো থেকে ফসকে গিয়ে তার বিদ্রোহী সত্ত্বার জানান দেয়। অনিকও যতই নিজের চিন্তাকে একপথে বেঁধে এনে একগামি করতে চায়, তার হৃদয় এক অধুনা-পরিচিতা নারীর স্তন স্পর্শের উত্তেজনায় উদ্বেলিত হয়ে একটানা বিরাটআকার কাষ্ঠল চওড়া আসবাবে হাতুরি পেটার মতো উচ্চগ্রামে ঢিপ ঢিপ করতে থাকে।

কিছুক্ষণ এভাবে এগুনোর পর হঠাৎ জয়া পিছন ফিরে তাকিয়ে অতর্কিতে অনিকের বুকে তার ডান হাতের তালু দিয়ে স্পর্শ করে। তারপর তাল সামলাতে না পেরে তার মাথাও অনিকের বুকে এলিয়ে পড়ে। জয়ার তার বুকের মাঝে ঢলে পড়া অনিক বেশ উপভোগ করলেও, জয়ার সাথে তার অনাত্মীয়তা বিবেচনা করে একে কিছুটা ভরৎসনাও না করে পারলনা। অনিকের বুকের তীব্র হাতুরিপেটার আওয়াজ শুনতে পেয়ে জয়া মাথা খানিকটা উঁচুতে তুলে চোখের দিক তাকিয়ে বলে, ”দাদাবাবু, আপনার ছাতি তো ফেটে যাচ্ছে। কেমন একটানা শব্দ করেই চলেছে।“

বি,দ্রঃ পাঠক-পাঠিকাদের গল্প পছন্দ হলে এর পরবর্তী সংস্করন প্রকাশ করব। কমেন্টে মতামত জানান।
 
Administrator
Staff member
Joined
Mar 16, 2024
Messages
1,167

পর্ব ৪ - Part 4​

অনিক তার দিকে তাকিয়ে এর কোন উত্তর খুঁজে না পেয়ে একটা শুকনো হাসি হাসে। জয়া কিছুক্ষণ এভাবে তার বুকে ঝুঁকে থাকবার পর আবার সোজা হয়ে ঘুরে বসে। অনিক যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে; জয়া ওভাবে তাকে লেপটে ধরে থাকায় তার অস্বস্তি যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল।

কোন প্রকার কথা না বলে তারা সামনে এগুতে থাকে। অনিক তার বাকিসব চিন্তা বাদ দিয়ে পুরোপুরি সাইকেল চালানোতেই মনোনিবেশ করে। সে অতি সন্তর্পণে হাতল ডায়ে-বায়ে ঘুরাতে থাকে যাতে জয়ার সাথে তার কোনোপ্রকার সংস্পর্শ না ঘটে। কিছুক্ষণ এভাবে ঘটনাবিহীন চলার পর আবার জয়ার স্তন তার বাঁ হাত ছুঁয়ে গেল। ইস! আবার সেই গা শিরশির করা অসহ্য ভালো লাগার ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ। দাঁতে দাঁত চেপে এসব চিন্তা বাদ দিয়ে সে সোজাভাবে সাইকেল চালাতে থাকে।

কি আশ্চর্য! এত সাবধানে চালাবার পরও আবার তার হাতে সে স্তনের পরশ অনুভব করে। অনিক কিছুটা বিস্মিত হয়, কিন্তু এটা নিয়ে বেশি না ভেবে পুনরায় একমনে সাইকেল চালানোয় মনোনিবেশ করে। কিন্তু এরপর নিয়মিত বিরতিতেই তা ঘটতে থাকে। তীব্র সুখানুভূতিতে বার বার সে কেঁপে উঠতে থাকে, তার গলা আবার ঢিলে হয়ে পিছনে হেলে পড়তে চাইল। হঠাৎ অনিক লক্ষ্য করল জয়া কিছুটা সামনে ঝুঁকে পড়ে তার স্তন অনিকের বাম হাতের সাথে চেপে চেপে ধরছে। অনিকের মাথায় যেন বাজ পড়ে।

সে অভিভূত হয়ে জয়ার তার নিজের হাতের উপর স্তন লেপটে দেয়ার দৃশ্য অবাক চোখে দেখতে থাকে। তার মনে হয় তার মস্তিষ্কের ভেতর একটি লাল-কালো আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হয়ে তার খোলা মাথা থেকে চুইয়ে চুইয়ে লাল থকথকে প্রচণ্ড সুখ চেতনাবাহী লাভা নির্গত হয়ে রক্তের ধারার সাথে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রবল উত্তেজনা আর আবেশে অনিক সামনে জয়ার কাঁধের উপর হেলে পড়ে তার দুই বাহুর মাঝে জয়াকে চেপে ধরে; তার কোমরও সে সীট থেকে ঠেলে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে জয়ার কোমরের ও বুকের মাঝে চেপে ধরার চেষ্টা করে।তার দেহের শিরাগুলো প্রচণ্ড অনুভূতিপ্রবণ রক্তের প্রবল স্রোতের ধারায় ফুলে উঠে। এদিকে জয়াও নিজের স্তন বেশ জোরাল ভাবেই অনিকের হাতে ঘষতে থাকে।

অনিক আর জয়া পিছনে থাকায় তাদের এ সীমিত পরিসরের উত্তাল শারীরিক সুখের আদানপ্রদান সামাদ বা মাসুদ কেউই খেয়াল করল না, আবার অন্ধকার হয়ে আসায় সবকিছু স্পষ্ট দেখা সম্ভবও ছিলনা। অনিক আর জয়ার এ রগরগে ঘর্ষণক্রীড়া বিনা বাধায় সমান তালে চলতে চলতেই তারা বাজারের কাছাকাছি চলে এলো। একটু দুরেই বাজারের এলইডি বাল্বের উজ্জ্বল আলো সবাই দেখতে পেল। সেই আলো অনিক ও জয়ার চোখে হালকা আঘাত করতেই তাদের সুখের তাড়নায় অবচেতন মনে খানিক চেতনা ফিরতে শুরু করে। জয়া হাতল ধরে সোজা হয়ে বসে পড়ে, তা দেখে অনিকও নিজের মনকে স্থির করার চেষ্টা করে তার কোমর পিছিয়ে নিয়ে সীটে ঠিকঠাক বসে পড়ে।

ধীরে ধীরে অনিকের চিন্তা আবার বাস্তবে ফিরে আসতে শুরু করে;সে সাগর,আকাশ,সৈকত চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। তারপর এতক্ষণ ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো একটার পর একটা পর্বত হতে গড়িয়ে পড়া বড় বড় পাথরের মতো তার মনের উপত্যকায় গড়িয়ে এসে ব্যাপক আঘাত হানতে থাকে। সে ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেনা এত অল্প সময়ের মাঝে কি থেকে কি ঘটে গেল। ভাবতে ভাবতে অনিকের জয়ার উপর চোখ পড়তেই সে দেখে জয়া এক হাতে তার কোমরের দিকে শাড়িটা ঠিক করছে, অনিক তার মুখের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করে তার সুন্দর চোখ দুটিতে যেন প্রবল এক খুশির বান এসে উপচে পড়ছে আর তার ঠোঁট দুটোতে আবছা এক হাসির ভাজ দেখা যাচ্ছে।

অনিক ভাবতে থাকে সে সারাজীবন নারীজাতি সম্পর্কে উদাসীন থেকেছে, সুন্দরী গুণবতী মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের সরাসরি বা ইঙ্গিতপূর্ণ প্রস্তাব পাওয়া সত্ত্বেও সেসবে কখনও লেশমাত্র বিচলিত হয়নি, তবে আজ এই সমুদ্রতীরে এমন কি হয়ে গেল যে সে এই কমবয়সী গাঁয়ের মেয়ের সংক্ষিপ্ত সান্নিধ্যে এমন উতলা হয়ে উঠল। ভাবতে ভাবতেই অনিক জয়াকে আবার ভালমত দেখতে থাকে। তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই অনিকের মন আবার ভাললাগায় ভরে যায়, পূর্বের অনভুতিগুলো যেন সর্বশরীরে শিরা উপশিরায় পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

তারা বাজারে এসে পড়লে অনিক, জয়ার সাথে তার নিকট বিচ্ছেদের সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। সে ভাবতে থাকে কি করে জয়ার সাথে আরও কিছুক্ষণ একান্ত নিভৃতে কাটানো যায়, কিন্তু কোন উপায়ই সে ঠাহর করতে পারেনা। এদিকে মাসুদ হঠাৎ নীরবতা ভেঙে বলে উঠে, “খিদে পাচ্ছে খুব, হালকা কিছু একটা খাওয়া দরকার চা এর সাথে।“
তারপর জয়ার দিকে তাকিয়ে মাসুদ বলল, “বাজারে ভালো চা ভাজাপোড়া কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন?”
“হ্যা, সামনেই আছে, চলুন দেখিয়ে দিচ্ছি।“

এই বলে জয়া তাদের সাথে হাঁটতে শুরু করে। তাদের দোকান দেখিয়ে দিয়ে বিদায় নেবার উপক্রম করতেই অনিক তার চোখের দিকে লঘুভাবে তাকিয়ে বলে, “কি বলছ জয়া, আমাদের সাথে দুটো কিছু খেয়ে নাও। একসাথে এতটা পথ যখন এলাম এক কাপ চা খেতে তো তখন আর আপত্তি থাকার কথা না।“

সামাদ আর মাসুদও জয়াকে অনুরোধ করলে জয়া রাজি হয়ে তাদের সাথে গিয়ে বেতের বেঞ্চিতে বসে পড়ে। চা ভাজাপোড়া খেতে খেতে তারা সবাই গল্প করতে থাকে; জয়ার পড়াশুনা, তার সামনের ভবিষ্যৎ, তাদের নিজেদের জীবন প্রফেশনাল ক্ষেত্র এসব নিয়ে গল্প ভালোই জমে উঠে। জয়া অনিকের পাশে বসায় তারা পা দোলালেই তাদের উরু একে অন্যের সাথে ধাক্কা লাগতে থাকে। অনিকের খুব ভালো লাগে জয়ার শরীরের এই অনিচ্ছাকৃত স্পর্শ। জয়া এরপর সন্তর্পণে তার পায়ের পাতা দিয়ে অনিকের পায়ের গোড়ালি থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত হালকা করে ঘষতে থাকে। অনিকের খুব ভালো লাগে সবার চোখের আড়ালে তাদের দুজনের নিম্নাঙ্গের এ লঘু ভালোবাসা। কিন্তু অনিক অনুভব করে অন্য একটা কিছুর জন্যে তার শরীর-মন যেন তৃষিত হয়ে আছে, তবে সেটা যে কি তা সে স্পষ্ট বুঝতে পারেনা;এই তৃষ্ণার স্বরূপ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে সে ভাবে নারী সম্ভোগের সুস্বাদু শরবতই হয়ত তার কাঙ্ক্ষিত পানপাত্র। আর এই নেশায় ভরপুর পানীয় যদি তার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যর্থ হয় তবে খরা মৌসুমে চাতকের মতোই হাহাকার করতে করতে উন্মাদ হওয়া ছাড়া তার আর কোন পথ খোলা থাকবেনা।

চা শেষ করে তারা বিল চুকিয়ে বাইরে আসে। সামাদ আর মাসুদ জয়াকে বিদায় জানিয়ে এগুতে গেলে অনিক বলে উঠে, “আচ্ছা তোরা হোটেলের দিকে আগা, আমি জয়াকে ওর মামার দোকানে পৌঁছে দিয়ে সাইকেলগুলোর ভাড়া চুকিয়ে আসছি।“
সামাদ বলল, “সাইকেলের ভাড়া এখনও দিস নি নাকি! আমাদের যে বারবিকিউ করবার কথা এখন।“
অনিক দ্রুত জবাব দেয়, “হ্যা, বারবিকিউ তো করবই। তোরা গিয়ে সব ঠিকঠাক করতে থাক, আমি কিছুক্ষণের মাঝে আসছি ।“
মাসুদ একটু হেসে বলে, “তাড়াতাড়ি চলে আসিস কিন্তু, হারাস না যেন। নাহলে পুরো মাছটা আমার পেটেই যাবে।“

অনিক হেসে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জয়ার পাশে বাজারের রাস্তা ধরে পূর্ব অভিমুখে হাঁটতে থাকে। জয়াকে পাশে নিয়ে হাঁটতে তার খুব ভালো লাগে, বুকের ভিতর আবার ঢিপঢিপ করে উঠে। কিছুদূর সামনে গেলে জয়া অনিক্ কে প্রশ্ন করে, “আপনি ওদের সাথে গেলেন না কেন? আর এদিকেই বা কেন হাঁটছেন আমাকে নিয়ে, আমার মামার দোকান তো পাশের গলি হয়ে যেতে হয়।“

অনিক খানিক অবাক হলেও সে ভাবে যে তার মনে যে ভাবনার ঢেউ বয়ে চলেছে জয়ার বুকেও হয়ত তার সমগোত্রের কোন তরঙ্গ বইছে, আর অনিক সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবে কিনা তা বাজিয়ে দেখবার জন্যেই হয়ত জয়া এসব তির্যক প্রশ্ন করছে। আর তা না হলেও অন্য একটি ব্যাখ্যার উদয় ঘটে তার মনে । অনিকের কখনও কোন প্রেমিকা না থাকলেও সে মেয়েদের মন যথেষ্ট বুঝে; যেকোনো অন্তিম পরিণামে যাবার আগে মেয়েরা যে কিছুটা দ্বিধা বোধ করে-এমনকি তাদের পরম আকাঙ্ক্ষার পুরুষ হলেও তাদের মনে সেই সংশয় জমে উঠেই-এবং সেই সংশয়ের নিমিত্তেই যে তারা সঠিক সঙ্গী নির্বাচনের জন্যে বিচিত্র সব পরীক্ষার মাধ্যমে পুরুষের দৃঢ়তার প্রমাণ পেয়ে সব ধরনের সংশয়মুক্ত হয়ে নিজেকে পুরুষের হাতে সঁপে দেয়ার সুখ পেতে চায় সেটা অনিক ভালমতই জানে। অনিক জোর কণ্ঠে বলে, “আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই। একদম ফাঁকা জায়গা আশেপাশে কোথায় আছে?”
জয়া অনিকের চোখে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কি একটা ভেবে নিয়ে বলে, “ফেরিঘাট পার হয়ে উত্তর বীচের দিকটা এখন পুরোপুরি ফাঁকা ।“

অনিক আর জয়া ফেরিঘাট পেরিয়ে উত্তর বীচে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। তীরে কিছু ভিড়ানো নৌকা , দূরে বাঁদিকে কিছু রিসোর্টের লাল নীল সাদা আলো, আর দূর থেকে ভেসে আসা কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ ছাড়া কোনোকিছুই তাদের ধারেকাছে যে কোন জনপ্রাণী রয়েছে তার কোন ইঙ্গিত দেয়না। তাদের চারপাশে ধু ধু মরুভূমির মতো বালি, ডানে ক্রমে ফুসে উঠতে থাকা সাগর আর আকাশে পূর্ণিমার গোল চাঁদ। জ্যোৎস্নায় সবকিছু মায়ার মতো দেখায়; সাগর, সমুদ্র, নৌকা সবই যেন ভিন্ন কোন ভৌতিক জগত থেকে উঠে আসা বস্তু, কোনকিছুই বাস্তব বলে মনে হয়না; সবই কল্পনা।

অনিক জয়ার পিঠের নিচে কোমরের পাশে যেখানে শাড়িটা আলগা হয়ে পিঠের নিম্নভাগের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে সেখানে তার ডান হাত আলতো করে রেখে জয়াকে তার শরীরের সাথে হালকা করে রেখে হাঁটছে। সমুদ্রসৈকতের নির্জনতা, জ্যোৎস্নারাত্রি, তার হাতের মাঝে থাকা অসম্ভব রূপসী সবই তার কাছে অত্যন্ত সুন্দর এক অবাস্তব ফ্রেমে বাধা চিত্র বলে মনে হয়। তবু হাঁটার তালে তালে জয়ার পিঠের ক্রমাগত স্পর্শ তাকে মনে করিয়ে দেয় এই মুহূর্তের বাস্তবতার সত্যতা। অনিক জয়াকে ভালমতো লক্ষ্য করে, তার ছ’ফুটের কাছাকাছি উচ্চতার দেহের পাশে অনেকটাই ক্ষুদ্র মনে হয় জয়াকে। তার বুকের সমান উঁচু হয়ে জয়া সামনে তাকিয়ে তার পাশে হাঁটছে। জয়া ধীর গলায় বলে উঠে, “দাদাবাবু, কি যেন বলবেন বলছিলেন তা বলে ফেলুন, আমাকে তো আবার ফিরতে হবে।“

জয়ার কথায় অনিকের ভাবনার যতি ঘটে। সে লঘুকণ্ঠে বলে, “হ্যা, বলতে তো চেয়েছিলাম।“
তারপর নিজেকে কিছুটা সংযত করে বলে, “জয়া, এখানে একটু বসি। তারপর বলছি।“
জয়া ঘাড় কাত করে অনিকের দিকে ঘুরে বলে, “এখানে বসবেন বাবু! চারদিক যে শুধু বালি।“
“তা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনা।“ –এই বলে অনিক তার পিঠের ছোট ব্যাগ থেকে একটা লম্বা জ্যাকেট বের করে নিচে বিছিয়ে দিয়ে জয়ার হাত ধরে তাকে পাশে বসিয়ে নিজে বসে পড়ে।

জয়া বসে পড়ে সামনে সমুদ্র দেখতে থাকে। জ্যোৎস্নার মাঝে জয়ার উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে অনিকের মনে হয়, এক চাঁদ যেন আরেক চাঁদের মুখ আরও আকর্ষণীয় করে তুলবার উদ্দেশ্যে নিজে যেচে এসে তার মুখে হালকা নেশা ধরানো নিভু নিভু আলো ফেলছে। জয়াকে খুব মায়াবি লাগছিল, তার মনে হল জ্যোৎস্নার আলোতে পৃথিবীতে নেমে আসা কোন শাড়ি পরিহিতা পরীকে যেন দেখছে সে। একদৃষ্টিতে জয়াকে কিছুক্ষণ দেখবার পর অনিক জয়ার পাশ ঘেঁষে বসে তার বাম হাত জয়ার ঘাড় স্পর্শ করে বাম কাঁধ উপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে জয়ার গাল আলতোভাবে স্পর্শ করে। জয়া কিছুটা নড়েচড়ে একটু দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনিক তাকে হাত দিয়ে তাকে ঘিরে রাখার কারণে খুব বেশি সরে যেতে পারে না। জয়া চাপা আওয়াজে বলে, “দাদাবাবু , কি করছেন!”

বি,দ্রঃ পাঠক-পাঠিকাদের গল্প পছন্দ হলে এর পরবর্তী সংস্করন প্রকাশ করব। কমেন্টে মতামত জানান।
 
Administrator
Staff member
Joined
Mar 16, 2024
Messages
1,167

পর্ব ৫ - Part 5​

অনিক জানে মেয়েরা পছন্দের সঙ্গীর কাছে পরিপূর্ণ দৈহিক ভালোবাসা প্রতিটি প্রেম কাতর অঙ্গে তীব্রভাবে কামনা করলেও মুখে শেষপর্যন্ত একটু প্রতিবাদ করতেই থাকে; যতক্ষণ না তাদের শরীরের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব পুরুষের হাতে চলে আসে আর সেও তার শরীর পুরুষের কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে ফেলে ততক্ষণ মেয়েরা এ হালকা আপত্তি বজায় রাখে। মূলত পুরুষের সর্বগ্রাসী থাবায় নিজের কোমল নারী শরীরের উপর অনাহুত আগ্রাসনের আশায় পুরুষের জলন্ত অঙ্গারধর্মী কামের শিখায় আহুতি দিয়ে পুরুষকে জ্বালিয়ে এবং নিজেও তাতে জ্বলে বীভৎস এক আনন্দ পেতে চায়।

তাছাড়াও নিজেদের সঁপে দেবার প্রশ্নে যেকোনো প্রকার আত্মগানি থেকে মুক্তি এবং তাদের সতীপনা নিরেট রাখবার চেতনায় ভুলবার জন্যেও এ উপায় তারা গ্রহন করে। সরল উত্তরে সমাধানের অতীত নারী চেতনার এ বিকৃত বহিঃপ্রকাশ ও নারীর সর্পিল যৌনাচারণ। অনিক তার পুরো শরীর জয়ার দিকে ঘুরিয়ে তার বা হাত জয়ার ঘাড় থেকে সামনে এনে দুহাতে জয়ার গালের দুপাশে রেখে জয়ার মুখকে তার সামনে নিয়ে আসে। সে জয়ার বিস্ফোরিত মায়াবী পদ্মআঁখি দুটিতে তার চোখ নিবদ্ধ করে বলে, “জয়া, আজ তোমাকে দেখবার পর থেকেই আমার শরীর মনে এক বিধ্বংসী আকাশ সাগর কালো হয়ে আসা ঝড়- প্রতি মুহূর্তে বয়ে যাচ্ছে। এখন কেবল তুমিই পার আমার এই ঝঞ্ঝাক্রান্ত হৃদয়ের মাঝে কিছুটা শান্তি এনে দিতে, তোমার পরশেই কেবল আমি আমার মনের হারানো সংলগ্নতা ফিরে পেতে পারি জয়া, নয়ত আমি চিরকালের জন্যেই এই বিক্ষুব্ধ চিত্তের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ছটফট করতে করতে অন্তর্হিত হয়ে যাব।“

পছন্দের পুরুষের চোখেমুখে নিজের জন্য পাগল্প্রায় কামনার আগুন আর তাকে পাওয়ার জন্যে পুরুষের শুভবুদ্ধি লোপ পেয়ে নিজের চেতনাকে পরিপূর্ণ হারানোর স্বগতোক্তির মতো শক্তিশালী অ্যাফ্রোডিসিয়াক নারীর পক্ষে উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব এক প্রস্তাব। নিজের অজান্তেই জয়া তার চোখ দুটো বন্ধ করে তার ঠোঁট অনিকের দিকে ঠেলে উচিয়ে ধরে।

গোলাপি ঠোঁট দুটো অনিকের দিকে ঠেলে এগিয়ে আসলে সে এক মুহূর্ত না ভেবে তার পুরুষালি ঠোটের মাঝে তাদের চেপে ধরে। সুখের আতিশয্যে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। তার মনে হয় যেন সুখের মহাকাশে সে বিচরণ করছে; মহাকাশে সে সম্পূর্ণ একা, তার গায়ে কোন বিভেদ তৈরিকারী স্পেসস্যুটও নেই; মহাকাশের সম্পূর্ণ স্বচ্ছ সুধারস সে একাই পূর্ণদ্যোমে পান করতে থাকে। অনিক জয়ার গোলাপি ঠোঁট চুষেই চলেছে। এরমাঝে জয়া অনিকের কাঁধ জড়িয়ে ধরে অনিককে টেনে নিজের উপরে নিয়ে তার নিচে শুয়ে পড়ে, অনিকের কাঁধ পিঠ নিজের বাহুবন্ধনে এঁটে ফেলে প্রবল চাপে বারবার নিজের বুকের সাথে অনিক কে পিষে ফেলতে থাকে।

জয়া তার পা দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু ভেঙে অনিকের কোমরে নিয়ে এসে পা দুটো দিয়ে তার কোমর চেপে ধরে। জয়ার এমন আগ্রাসী,আবেগময় আলিঙ্গনে অনিক শৃঙ্গার রসের গনগনে আগুনের শিখায় জ্বলতে জ্বলতে আরও তীব্রভাবে জয়ার ঠোঁট চুষতে থাকে। একটানা কিছুক্ষণ জয়ার ঠোঁট চুষে গোলাপি ঠোঁট দুটোকে লাল করে ফেলে অনিক এবার জয়ার গালে, কপালে, গলায় চুমুতে ভরিয়ে দেয়; সাথে তার হাত দুটোও শাড়ির উপর দিয়ে জয়ার অনভিজ্ঞ শরীরে একটানা ঘুরতে থাকে। শাড়ির উপর দিয়েই সে জয়ার কোমর, বুক, উরু, নিতম্বের উপর কামোদ্দীপ্ত অস্থির হাত বোলাতে থাকে।

জয়ার চোখ বন্ধ হয়ে এসে একটানা এ প্রবল শৃঙ্গারের আনন্দে ভাসতে ভাসতে মুখ থেকে হালকা গোঙানির মতো আওয়াজ বের হয়। অনিকের শক্তিশালী ভারী হাত নিয়মিত শাড়ির উপর যাতায়াতের ফলে ডুরের শাড়ি আলগা হয়ে জয়ার শরীর থেকে প্রায় খুলেই যায়। অনিক জয়ার নগ্ন কোমল শরীরের উপস্থিতি আবছা আবছা বুঝতে পেরে জয়ার উপর থেকে উঠে বসে জয়াকে খানিক ঘুরিয়ে শাড়ির আচ্ছাদন থেকে তাকে মুক্ত করে। জয়ার শাড়ি বিহীন পেটিকোট, ব্লাউসে আবৃত আংশিক নগ্ন শরীর খোলা আকাশের নিচে এই প্রথম উন্মুক্ত হয়। “উফফ, হালকা সবুজ ব্লাউসে জয়ার ফর্সা টাইট শরীর কি সুন্দর দেখাচ্ছে”- অনিক নিজের মনে ভাবে। কিন্তু এতেই মন ভরেনা অনিকের, জয়ার চন্দন বর্ণের ফর্সা সুন্দর পেট, নেশায় নিজেকে ভুলে যাবার মতো অসাধারন কোমরের বক্রতা দেখে অনিকের লোভ তখন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। জয়ার কোমর ও হিপের মাঝে দুদিকে হাত দিয়ে জয়ার শরীরকে উঁচু করে তুলতে গিয়ে অনিক জয়াকে জড়ানো কণ্ঠে বলল, “জয়া, পাছা উঁচু কর সোনা।“

জয়া এক মুহূর্ত চোখ খুলে অনিক কে দ্রুত দেখে নিয়ে দ্রুত চোখ দুটো বন্ধ করে বাধ্য মেয়ের মতো তার নিতম্ব ও কোমর তুলে ধরে। অনিক তৎক্ষণাৎ কুশলী হাতে দ্রুত পেটিকোটটি নিচে নামিয়ে হাঁটু হয়ে পায়ের পাতা দিয়ে গলিয়ে পাশে ফেলে দেয়। জয়ার রম্ভাকান্তিতে বিকশিত উরু, পুস্পবানে জর্জরিত অনিকের সামনে দুদিকে ছড়িয়ে তাকে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বার জন্যে প্রলুব্ধ করতে থাকে। অনিক উরু দুটোর উপর খানিকক্ষণ পলকহীনভাবে চেয়ে থেকে তাদের হাতছানিকে আর এক মুহূর্ত নিবৃত্ত না করতে পেরে জয়ার ডান উরুতে হাত বুলিয়ে উরুর থলথলে মাংসে চুমু খেতে শুরু করে।

চুমু খেতে খেতে ডান উরু ছেড়ে বাম উরুতে তার হাত বোলায়। এবার দুই উরুতে তার দুই হাত বোলাতে বোলাতে উরুসন্ধিস্থলের চারদিকে চুমুতে ভরিয়ে ফেলে সেখানে তার জিভ বোলানো শুরু করে। এতকাল লোকচক্ষের আড়ালে সংগোপনে থাকা সংবেদনশীল জননাঙ্গের চারপাশে পুরুষের ঠোঁট জিভের কামাতুর স্পর্শ পেয়ে জয়া লজ্জায় সুখে অতিষ্ঠ হয়ে কণ্ঠ বেয়ে উঠতে থাকা গোঙানির আওয়াজ দাঁত দিয়ে চেপে আটকাবার চেষ্টা করে মাথা দুদিকে আনচান করে ছুঁড়তে থাকে। তার হাত দুটো কিছুটা নিচে নেমে অনিকের মাথা তার জননাঙ্গে চেপে ধরতে চাইলেও, মাঝপথেই জয়া সে ইচ্ছাকে নিবৃত্ত করতে পারলে তার হাত দুটো আগের অবস্থানে ফিরে আসে।

জয়ার শরীর থরথরিয়ে কাঁপতে থাকে। অনিক ইচ্ছে মতো উরুতে চুমু খেয়ে, জিভ দিয়ে চুষে, হাত বুলিয়ে, খামচে ধরে চটকে অবশেষে উঠে জয়ার উরুর মাঝে হাঁটু মুড়ে বসে ম্যাচিং সবুজ ব্লাউস আর পেনটি পরা জয়ার বালিঘড়ি আকারের ফর্সা কামোদ্দীপক শরীরটাকে চোখ দিয়ে গিলে খেতে খেতে ঠোঁটে জিভ বোলায়। অনিক হাঁটু ভেঙে পদ্মাসনে বসে সামনে ঝুঁকে জয়ার কোমরের দুদিকে হাত গলিয়ে তার পিঠ জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে। জয়ার পিঠ পিছনে বেঁকে গিয়ে বাহুবন্ধনের মাঝে শূন্যে ভেসে থেকে বৃত্তের চতুর্থাংশের অদৃশ্য বক্রতা পূর্ণ করে। অনিকের পেটে জয়ার পেট লেপটে থেকে ধীরে ধীরে দুজনেই উঠে বসে। জয়ার পা দুদিকে ছড়ানো থাকায় সোজা হয়ে উঠে অনিকের কোলের উপর বসে অনিকের দুদিকে হাঁটু ভাজ করে তার দু পা ছড়িয়ে রাখে।

অনিকের চোখের সামনে তার আকাঙ্ক্ষার দেবী যেন আচমকাই সমুদ্র ফুঁড়ে উঠে আসে। সাক্ষাত লক্ষ্মীকে যেন কাছ থেকে দেখছে অনিক। জয়ার খোঁপা খুলে গিয়ে তার রেশমি ঘন কালো চুল মাথার দুপাশে পাহাড়ি ঝরনার মতো স্তরে স্তরে ভেঙে পড়ে কোমর পেরিয়ে অন্তিম একটা দোল খেয়ে অবশেষে স্থির হয়ে দেবীর শরীরকে বেষ্টন করে রাখে। জয়ার নব অবমুক্ত এ রুপের সুষমায় অনিক হতবুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজেকে এরপর স্থির করে জয়াকে ভালমতো কয়েক মুহূর্ত প্রাণভরে দেখে নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে অনিক তার ঠোঁটে, গালে, চোখে উন্মাদের মতো চুমু খেতে শুরু করে, জিভ দিয়ে তার পুরো মুখ চাটতে থাকে।

জয়ার পুরো শরীরে তার হাত দুটো বিচরণ করে- কোমরে, বুকে, পিঠে, নিতম্বে। পেট, কোমর, নিতম্বের মাংস হালকা করে চেপে চেপে ধরে। কোমরে হালকা খামচে ধরলে জয়া ঘাড় পিছনে ঠেলে দিয়ে চোখ মুখ চেপে ধরে আরামে “উফফ” করে উঠে। ঘাড়ের উপর চুলের গোঁড়ায় আঙুলের মাথাগুলো আলতো চেপে ধরে ঘাড়ে হাত রেখে জয়ার মুখ নিজের কাছাকাছি টেনে এনে অনিক আবার জয়ার ঠোঁট চুষতে আরম্ভ করে। পিঠে হাত বুলিয়ে অনিক জয়ার ব্লাউসের চেন ধরে তা নিচে নামিয়ে দেয়। জয়াকে ব্লাউস খুলে ফেলতে বললে জয়া একহাত দিয়ে টেনে অন্য হাতের বাহু গলিয়ে দুই দিকের হাতা নামিয়ে ফেলে ব্লাউসটা পাশে ছুঁড়ে ফেলে অনিক কে জড়িয়ে ধরে অনিকের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খায়।

অনিকের হাত জয়ার উন্মুক্ত পিঠ জুড়ে ঘুরতে থাকে। নিজেকে জয়ার আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে জয়ার বুকের দিকে চোখ নামিয়ে অনিক দেখে জয়ার ভারী স্তনগুলোকে অফ-হোয়াইট রঙের একটি ব্রা এঁটে ধরে উঁচিয়ে রেখেছে। ব্রায়ের ভিতরের স্তনবৃন্ত দুটো তাদের এতক্ষণের লীলাখেলায় শক্ত হয়ে আবছাভাবে নিজের অস্তিত্ত্ব প্রকাশ করছে। অনিক মুখ নামিয়ে ব্রায়ের আশেপাশে স্তনের উপরের অঞ্চলে ও ব্রায়ের উপর দিয়েই স্তনে মুখ ঘষে।

বুকের উপর অনিকের মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ির ছোঁয়ায় জয়া শিউরে একটু লাফিয়ে উঠে। অনিক তার ডান হাত পিঠে ঘুরাতে ঘুরাতে হঠাৎ বুড়ো আঙুল ব্রায়ের হুকের পাশে বসিয়ে বাকি দুটো আঙুল হুকের উপর স্লাইড করে ব্রায়ের সবকটি হুক খুলে ফেলে। তারপর দুহাত দিয়ে ব্রায়ের ফিতে দুটো কাঁধ থেকে নামিয়ে দিতেই জয়ার বুক থেকে ব্রাটা সরকে গিয়ে অনিকের কোলের উপর এসে পড়ে। সে ব্রাটা তুলে নিয়ে নাকের কাছে গুজে চোখ বন্ধ করে অন্তর্বাসে বন্দি জয়ার বুকের সুবাস নিতে থাকে; কামাতুর অনিক তার প্রিয়তমার স্তনের সৌরভে যেন হাজার হাজার ঝরে পড়া কামিনী ফুলের মৌ মৌ করা সুবাস খুঁজে পেয়ে অভিভূত হয়ে সেই সৌরভ তার পুরো শরীরে মেখে নিতে চায়।

সৌরভে মন তৃপ্ত হলে প্রিয়তমাকে নিজের কাছে খুঁজে পেতে চোখ খুলে ব্রাটা পাশে ফেলে দিয়ে অনিক তার সামনে স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার পানে বৃন্ত উঁচিয়ে ধরা দুটো নিশাচর সূর্যমুখীর দেখা পায়। সে আলতোভাবে সে ফুলের পাশে হাত রেখে বৃন্তের চারপাশে চুমু দিতে থাকে। বসে থেকে এভাবে আদর করতে খুব একটা সুবিধা না পেয়ে সে জয়াকে কাঁধের দুপাশে হাত দিয়ে একসাথে আলতো ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। জয়া নিচে পড়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকে।

বি,দ্রঃ পাঠক-পাঠিকাদের গল্প পছন্দ হলে এর পরবর্তী সংস্করন প্রকাশ করব। কমেন্টে মতামত জানান।
 
Love reading at 18upchoti? You can also share your stories here.
[ Create a story thread. ]
Top